পৃথিবীর বুকে রাশিয়ায় প্রথম শ্রমিকশ্রেণির রাষ্ট্র নির্মাণের অগ্রদূত ছিলেন লেনিন। লেনিন তাঁর পিতৃপ্রদত্ত নাম নয়। তাঁর আসল নাম ভ্লাদিমির ইলিচ উলিয়ানভ। ১৯০২ সালে তিনি লেনিন নাম গ্রহণ করেন।
লেনিনের জন্ম ১৮৭০ সালের ২২ এপ্রিল রাশিয়ার সিমবার্স শহরে। তাঁর বয়স যখন ১১ বছর, ১৮৮৭ সালে লেনিনের বড় ভাই আলেক্সান্ডার উলিয়ানভকে তৃতীয় জার আলেক্সান্ডারকে হত্যা ষড়যন্ত্রের অপরাধে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। সেই শৈশবে বড় ভাইয়ের মৃত্যুর ঘটনা তাঁকে ভীষণভাবে আলোড়িত করে। তাই তিনি জার উচ্ছেদে নিজেকে উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নেন।
১৮৮৭ সালের ডিসেম্বরে কাজান বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে লেনিন গ্রেপ্তার হন এবং তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেন্ট পিটার্সবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি আইন পরীক্ষায় পাস করে কিছুদিন ওকালতিও করেন। তত দিনে তিনি জার্মান চিন্তাবিদ কার্ল মার্ক্সের রচনার প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হয়ে ওঠেন। ১৮৯৫ সালের ডিসেম্বরে আবার জারের পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। ১৮৯৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে লেনিনকে তিন বছরের জন্য সাইবেরিয়ায় নির্বাসন দেওয়া হয়।
১৮৯২ সালে লেনিন সামারায় প্রথম মার্ক্সবাদী দল গঠন করেন। এরপর তিনি রাশিয়ার রাজধানী পিটার্সবার্গে চলে আসেন। মার্ক্সবাদের গভীর জ্ঞান এবং রুশীয় পরিস্থিতিতে তা প্রয়োগের দক্ষতা, শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে অবিচল থাকায় পিটার্সবার্গে মার্ক্সবাদী স্বীকৃত নেতা হয়ে উঠেছিলেন।
১৯১৭ সালের অক্টোবর বিপ্লব রাশান প্রভিশনাল গভর্নমেন্টকে উচ্ছেদ করে জার শাসন ও রুশ সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটে। বলশেভিকদের নেতা ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের নেতৃত্বে প্রলেতারিয়েত রাজ কায়েমের লক্ষ্যে জার শাসনের অবসান ঘটে।
১৯২৪ সালে রাশিয়ার সংবিধান গৃহীত হয়। নিজ দেশে সমাজতন্ত্র কায়েম করেই লেনিনের পার্টি থেমে থাকেনি, পুঁজিবাদের শোষণ থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করতে বিপ্লব রপ্তানি করার দায়িত্বও তাঁর নেতৃত্বে অবিচলভাবে পালিত হয়। তাই আজও পুঁজিবাদী বিশ্বের আতঙ্ক লেনিন এবং তাঁর অনুসারীরা।