‘আয়নাবাজি’ সিনেমাটি যাঁরা দেখেছেন, তাঁদের নতুন করে বলার কিছু নেই। কিন্তু যাঁরা দেখেননি, তাঁদের সংক্ষেপে গল্পটা জানা জরুরি। গল্পটা এমন—সিনেমার প্রধান চরিত্র আয়না অন্যের হয়ে জেল খাটেন। সেটা ইচ্ছাকৃত। কারণ, এর বিনিময়ে তিনি পারিশ্রমিক পান। যাঁর বদলে জেল খাটেন, সেই ব্যক্তি আয়নাকে একটা সময় জেল থেকে ছাড়িয়ে নেন।
যদিও সিনেমার গল্পের সঙ্গে বাস্তবের লিটনের গল্প পুরোপুরি মেলে না, কারণ লিটন জেল খাটছেন অনিচ্ছাকৃতভাবে, একজন পুলিশ কর্মকর্তার ভুলে। ডাকাতির প্রস্তুতির মামলায় আট দিনের বেশি সময় ধরে আছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। ‘আসামির বদলে জেলে নিরপরাধ ব্যবসায়ী’ শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়েছে রোববারের আজকের পত্রিকায়। সেই খবর থেকে জানা গেছে এ রকম তথ্য।
একই নামধারী দুই ব্যক্তি—মোহাম্মদ লিটন। তাঁদের বাবার নামও অভিন্ন, মোহাম্মদ ইসহাক। বাড়িও একই জায়গায়, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নে। এতটুকুই মিল। আর অমিল মায়ের নামে। বয়সও ভিন্ন ভিন্ন, একজনের ৪০, আরেকজনের ২০। কিন্তু পুলিশ এসব যাচাই না করে এক লিটনের বদলে আরেক লিটনকে জেলে পুরেছে।
২০১৪ সালে সীতাকুণ্ড থানায় একটি ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা হয়। সেই মামলার দণ্ডিত আসামি লিটনের বয়স ২০। তিনি জামিন নিয়ে অনেক আগেই দেশ ত্যাগ করেছেন।
এদিকে ৯ ডিসেম্বর লিটনকে গ্রেপ্তারের জন্য সোর্স নুরুজ্জামানের সহায়তায় সীতাকুণ্ড থানার উপপরিদর্শক মোতাব্বির হোসেন মুঠোফোনে ওয়ার্কশপ ব্যবসায়ী লিটনকে আলমারি বানানোর কথা বলে থানায় আসতে বলেন। থানায় গেলে লিটনের বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা রয়েছে জানিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আদালতে সোপর্দ করা হয় তাঁকে। এরপর থেকে ৪০ বছর বয়সী এই লিটন কারাগারে রয়েছেন।
এই লিটনের ছেলে নুর উদ্দিন রাব্বি তাঁর বাবার মুঠোফোন ও মানিব্যাগ ফেরত চাইলে এসআই মোতাব্বির চার হাজার টাকা দাবি করেন।অনেক অনুনয়ের পর দুই হাজার টাকা দিয়ে মুঠোফোন ও মানিব্যাগ ফেরত পান রাব্বি। আবার লিটনের বন্ধু মো. শওকত থানায় গিয়ে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে তাঁকেও মোতাব্বির গ্রেপ্তারের ভয় দেখান।
পরে আদালতের নির্দেশে লিটনের পরিচয় নিশ্চিত করতে গিয়ে এক লিটনের বদলে আরেক লিটনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানা যায়। এই ভুল স্বীকারও করেছেন সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ। এখন লিটনকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য তাঁরা আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
লিটন হয়তো ছাড়া পাবেন। কিন্তু একজন নির্দোষ মানুষকে এভাবে হেনস্তা করার জন্য মোতাব্বির হোসেনের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে? শুধু লিটনকে গ্রেপ্তার করা নয়, তাঁর ছেলে ও বন্ধুর সঙ্গেও অসদাচরণ করা হয়েছে। টাকার বিনিময়ে মুঠোফোন ও মানিব্যাগ ফেরত দেওয়া তো আরেক ডাকাতিই। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধেও মামলা হওয়া উচিত নয় কি? অপরাধ দমনের দায়িত্ব যাদের, সেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপরাধ করলে এর প্রতিকার কী?