মেঘনা নদীতে চলাচলকারী ও বন্দরে অবস্থান করা নৌযানগুলোকে দুর্যোগ মোকাবিলায় আগাম বার্তা দেওয়ার জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার নির্মাণ করা হয়। প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটিতে চারজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী থাকলেও তাঁদের দেখা যায় না বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। দিনের পর দিন তালাবদ্ধ থাকে কার্যালয়টি।
এ ছাড়া নদীতে নেই কোনো নৌ-সিগন্যাল যন্ত্র। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে নৌযানগুলো। তদারকির অভাবে পর্যবেক্ষণাগারটি বর্তমানে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
জানা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে আশুগঞ্জ উপজেলার যাত্রাপুর মৌজায় নির্মাণ করা হয় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটি। মেঘনা নদীর একপাশে আশুগঞ্জ আন্তর্জাতিক নৌবন্দর। অপর পাশে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব নদীবন্দর। এ নদীতে সাতটি রুটে চলাচলকারী ও আশুগঞ্জ বন্দরে অবস্থানকারী নৌযানগুলোকে আগাম সতর্ক বার্তা দেওয়ার জন্য এটি নির্মাণ করা হয়। সে লক্ষ্যে জনবলও নিয়োগ দেওয়া হয়, তবে তাদের কেউই নিয়মিত অফিস করেন না বলে অভিযোগ নৌযানের চালক ও শ্রমিকদের। সে কারণে তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকে পর্যবেক্ষণাগারটি। শুধু একজন অস্থায়ী ভিত্তিতে নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছেন। তাঁকেও সব সময় দেখা মেলে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, একজন নিরাপত্তা প্রহরী ঘোরাঘুরি করছে। নাম পরিচয় জানতে চাইলে তিনি কিছু বলেনি। শুধু বলেছেন, তিনি ছোট চাকরি করেন। দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারী কবে, কখন আসে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।
এদিকে আগাম সতর্কবার্তা না পাওয়ায় তাঁরা দুর্ঘটনার শিকারও হচ্ছেন। প্রায়ই বন্দরে আটকা পড়ে শতাধিক পণ্যবাহী জাহাজ। অনেক সময় কাঁচামাল ও অন্যান্য পণ্য নষ্ট হয়ে যায়।
নৌযান শ্রমিক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে আবহাওয়া অফিস আছে সেটা আমাদের জানা নেই।’
আরেক শ্রমিক তৈয়ব আলী জানান, ‘আশুগঞ্জ বন্দরে আসলে আমরা সব সময় আতঙ্কে থাকি। এই বন্দরে আগাম কোনো খোঁজ-খবর মিলে না।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুল্লাহ বাহার বলেন, ‘বিশেষ করে রাতে নৌযান চলাচল করা খুবই কঠিন। তারপরও প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটি থেকে আমরা কোনো বার্তা পাই না। এই অফিসে কেউ চাকরি করে কিনা তাও আমরা জানি না।’
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসের উপপরিচালক (চলতি দায়িত্বে) সৈয়দ আবুল হাসানাৎ বলেন, ‘আমি খোঁজ নিচ্ছি। পাশাপাশি তদন্ত করে দেখা হবে তাঁরা নিয়মিত অফিস করেন কিনা। অভিযোগ সত্য হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’