দেশে ফুটবলার তৈরির ‘পাইপলাইন’ হিসেবে বিবেচিত বয়সভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্ট পাইওনিয়ার লিগ। অতীতে এই অনূর্ধ্ব-১৫ টুর্নামেন্টে অনেকবারই উঠেছে ফুটবলারদের বয়স চুরির অভিযোগ। এবার আয়োজকেরা এ বিষয়ে সতর্ক থাকার অঙ্গীকার করার পরও বয়স চুরি নিয়ে অভিযোগ তুলেছে একাধিক দল।
ঘরোয়া ফুটবলের তৃণমূল পর্যায়ের টুর্নামেন্ট পাইওনিয়ার লিগে এবার কঠোর হওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন টুর্নামেন্টের চেয়ারম্যান ইমরুল হাসান। বয়স চুরি প্রতিরোধে হাসপাতালে বোন টেস্ট বা হাড় পরীক্ষার মাধ্যমে বয়স নির্ধারণের ব্যবস্থাও করেছিল পাইওনিয়ার লিগ কমিটি। কিন্তু কড়াকড়ি নিয়মের ফাঁক গলেই অতীতের মতো উঠেছে ফুটবলারদের বয়স নিয়ে প্রশ্ন আর অভিযোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩০ মে ব্রাদার্স ইউনিয়ন মাঠে পূর্ব জোনের বাংলাদেশ স্পোর্টিং ক্লাবের বিরুদ্ধে বয়স চুরি করে ফুটবলার খেলানোর অভিযোগ তোলে খিলগাঁও কিশোর ফুটবল একাডেমি। পরদিন ৩১ মে গেন্ডারিয়া পাওয়ার সান ক্লাবের বিপক্ষে ১৯ গোলে জয় পাওয়া জারা গ্রীন ভয়েস কিশোর বাংলা ক্লাবের বিরুদ্ধেও আছে ফুটবলারদের বয়স চুরির অভিযোগ। এই জারা গ্রীনের বিরুদ্ধে ২ জুন লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিল স্কাইলার্ক ফুটবল ক্লাব। বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে বয়স নির্ধারণী পরীক্ষার পর অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় জারা গ্রীন ক্লাবকে।
পশ্চিম জোনের দল ধানমন্ডি ২৪ ফুটবল একাডেমির ৬ ফুটবলারের বয়স নিয়ে প্রশ্ন তুলে ৭ জুন লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে ঢাকা গোল্ডেন ফিউচার ফুটবল একাডেমি। গোল্ডেন একাডেমির কোচ ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার শেখ বেলাল আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘সাদা চোখেই বোঝা যায় ধানমন্ডির ফুটবলারদের বয়স অনেক বেশি। পাইওনিয়ার ফুটবলে নিবন্ধন না করলে বুঝতামই না এখানে কীভাবে অনিয়ম হচ্ছে। অথচ এই লিগ থেকেই আলফাজ আহমেদ-আমিসহ অসংখ্য ফুটবলার জাতীয় দলে খেলেছি। পাইপলাইনেই যখন দুর্নীতি, তখন ফুটবলার উঠে আসবে কীভাবে?’ এ অভিযোগ অস্বীকার করে ধানমন্ডি ২৪ দলের কোচ রিপন বলেছেন, ‘আমাদের সব খেলোয়াড়ের বয়স মেডিকেল পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা কারও বয়স লুকাইনি।’
প্রশ্ন উঠেছে, হাড় পরীক্ষার পরও কীভাবে মাঠে নামছে নির্ধারিত বয়স ছাড়িয়ে যাওয়া ফুটবলাররা? অভিযোগ করা এক ক্লাবের কোচ বললেন, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের হাড় পরীক্ষার রসিদে শুধু খেলোয়াড়ের নাম ও বয়স লেখা থাকে। কোনো ছবি থাকে না। এক বাচ্চা খেলোয়াড়ের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন দিয়ে যদি আরেক বয়স্ক ফুটবলারকে খেলানো হয়, কেউ ধরতে পারবে না যে আসলে কার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে।
পাইওনিয়ার ফুটবল নিয়ে অভিযোগ শুধু এটিই নয়। মানহীন মাঠ, নিম্নমানের জার্সির সঙ্গে অভিযোগকারী দলের কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ লিগের বাইলজ নিয়েও। ম্যাচকেন্দ্রিক কোনো অভিযোগ থাকলে ম্যাচ শেষ হওয়ার তিন ঘণ্টার মধ্যে লিখিত আকারে সেই অভিযোগ জমা দিতে হয় মতিঝিলে অবস্থিত ফেডারেশনে গিয়ে। সঙ্গে জমা দিতে হয় ৫ হাজার টাকা। কেন্দ্রীয় জোনের ভেন্যু পল্টনের আউটার স্টেডিয়ামের বাইরে নারায়ণগঞ্জ, উত্তরা, গোলারটেক মিরপুর থেকে ঢাকার যানজট ঠেলে নির্ধারিত সময়ে অভিযোগ জমা দেওয়া প্রায় অসম্ভব বলে জানালেন কোচ বেলাল আহমেদ।
বাফুফে সহসভাপতি ও পাইওনিয়ার ফুটবল লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ইমরুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পাইওনিয়ার ফুটবল লিগ কমিটির কো-চেয়ারম্যান ইলিয়াস হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরামর্শ দেন পাইওনিয়ার লিগ উপকমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান মহিদুর রহমান মিরাজের সঙ্গে কথা বলতে। মিরাজ আগামী আসরে বাইলজের নিয়ম শিথিল করার কথা বললেন। ৫ হাজার টাকা দিয়ে অভিযোগ দাখিলের নিয়মও তুলে নেওয়া হবে জানান তিনি। আর বয়স চুরির অভিযোগ প্রসঙ্গে মিরাজ বলেন, ‘সব দলই ছয়জন অনূর্ধ্ব-১৬ বয়সের ফুটবলার খেলাতে পারবে। প্রতিপক্ষ দলের ফুটবলারদের বয়স যদি ১২-১৩ হয় তাহলে এদের পাশে সেই ছয়জনকে তো বড় লাগবেই। আর হাড় পরীক্ষায় ৫-১০ শতাংশ প্রতিবেদন ভিন্ন হতেই পারে।’