মানবতার মুক্তিদূত মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানবতার শিক্ষক হিসেবে দুনিয়ার বুকে আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাঁর অনন্য গুণ ছিল সত্যবাদিতা, বিশ্বস্ততা ও ন্যায়পরায়ণতা। এ কারণে কাফির-মুশরিকেরাও তাঁকে ‘আল-আমিন’ বা ‘বিশ্বস্ত’ বলে ডাকত। আমানতদার ব্যক্তি সব সমাজেই প্রশংসিত।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে আমানত রক্ষার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমানতসমূহ তার প্রকৃত পাওনাদারদের কাছে প্রত্যর্পণ করতে আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন।’ (সুরা নিসা: ৫৮)
এ আমানতের বিস্তৃতি জীবনের সর্বক্ষেত্রে। ব্যক্তিজীবনে নিষ্ঠার সঙ্গে ইবাদত করা তথা আল্লাহর আদেশ পালন করা এবং নিষেধ থেকে বিরত থাকা, হালাল-হারাম মেনে চলা, লেনদেনে, চালচলনে, কাজকর্মে আল্লাহর বিধিবিধান মেনে চলা—সবই আমানতদারির বিভিন্ন অংশ। ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জীবনেও আমানতদারি রক্ষা করা জরুরি।
আমানত ব্যাপক অর্থবোধক একটি বিষয়। এর প্রধান অনুষঙ্গ তিনটি—জীবন, সম্পদ ও সম্মান। এর মধ্যে রয়েছে আর্থিক আমানত, কথার আমানত, গোপনীয়তা রক্ষার আমানত, সম্ভ্রমের আমানত, দায়িত্বের আমানত, ইলমের আমানত, ইসলামি দাওয়াতের আমানত, দ্বীন প্রতিষ্ঠার আমানত, রাষ্ট্রীয় আমানত, নেতৃত্ব ও পদমর্যাদার আমানত, ন্যায়বিচারের আমানত, জনগণের আমানত, প্রতিষ্ঠানের আমানত, চাকরির আমানত, ব্যবসায়ের আমানত, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের আমানত, পরিবার প্রতিপালনের আমানত ইত্যাদি।
আল্লাহ প্রদত্ত সব নিয়ামতই বান্দার কাছে আমানত। এসবের হেফাজত করতে হবে, নাহয় পরকালে জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহ তাআলা যে সম্পদ দিয়েছেন, তা দ্বীনের পথে মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতে হবে। অন্যথায় তা খেয়ানত হিসেবে গণ্য হবে। সফল মুমিনদের সাতটি গুণের অন্যতম হলো, ‘যারা তাদের আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করে।’ (সুরা মুমিনুন: ৮)
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি