রাজনীতি আর সাংবাদিকতা দুটোই তিনি করেছেন নিষ্ঠার সঙ্গে। আর করেছেন সাহিত্য রচনা। তাঁর ‘সারেং বৌ’ কিংবা ‘সংশপ্তক’ উপন্যাসই তো প্রমাণ করে দেয়, কত বড় মাপের লেখক ছিলেন তিনি।
শহীদুল্লা কায়সার নিজে বলতেন, জেলখানাই তাঁকে সাহিত্যিক বানিয়েছে। ‘সারেং বৌ’ উপন্যাসটি লিখেছেন আইয়ুব খান যখন তাঁকে জেলে পাঠালেন, তখন। তিন পর্যায়ে আটবার তাঁকে জেল খাটতে হয়েছে। জেলখানাই হয়ে উঠেছিল পড়াশোনা আর সাহিত্যচর্চার জায়গা।
কারাগারে বসেই তিনি তাঁর সব উপন্যাস রচনা করেন। একটি ছাড়া। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘কবে পোহাবে বিভাবরী’ নামে চার খণ্ডের একটি উপন্যাস রচনার কাজে হাত দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার ও ধ্বংসলীলার ছবি এঁকেছিলেন সে উপন্যাসে। রাত জেগে লিখতেন, ভোর হওয়ার আগে পাণ্ডুলিপি লুকিয়ে রাখতেন কায়েতটুলির বাড়ির মাটির তলায়। দুই খণ্ড লিখতে পেরেছিলেন। শেষ করে যেতে পারেননি।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা। কায়েতটুলীর বাড়িতে শহীদুল্লা কায়সার বিবিসি শোনার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। স্ত্রী পান্না কায়সার মেয়েকে ফিডারে দুধ খাওয়াচ্ছিলেন। এ সময় দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। ছোট ভাই ওবায়েদুল্লা এসে বললেন, ‘বড়দা, কে যেন কড়া নাড়ছে। খুলে দেব?’
উৎসাহ নিয়ে শহীদুল্লা বললেন, ‘তাড়াতাড়ি খুলে দাও।’
এ কথা বলে তিনি আলমারি থেকে টাকা বের করলেন মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়ার জন্য। কিন্তু ঘরে যারা ঢুকল, তারা মুক্তিযোদ্ধা নয়। কালো কাপড়ে মুখ বাঁধা কয়েকজন লোক। তারা জিজ্ঞেস করল, ‘শহীদুল্লা কায়সার কে?’
তিনি নিজের পরিচয় দিলেন। মুখোশে ঢাকা লোকগুলো তাঁকে বাইরে নিয়ে যেতে চাইল। পান্না কায়সার আর শহীদুল্লা কায়সারের বোন এসে ভাইয়ের হাত চেপে ধরলেন। কিন্তু তাঁদের বাধা উপেক্ষা করেই শহীদুল্লা কায়সারকে নিয়ে গেল ওরা। যাওয়ার সময় শহীদুল্লা কায়সার স্মিত হেসে বলেছিলেন, ‘ভালো থেকো।’ এরপর তাঁকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সূত্র: গুণীজনওআরজিডটকম