যুদ্ধ, শিল্পকারখানা, রাজনীতি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি সবকিছু পরিচালিত হয় অর্থনীতিকে কেন্দ্র করে। তাই বিশ্ব নেতৃত্বের জন্য শক্তিশালী অর্থব্যবস্থার বিকল্প নেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পাউন্ডের আধিপত্য কমতে থাকে, সেই সুযোগে শক্তিশালী হয় ডলার। চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, নিরাপত্তাব্যবস্থার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থা নতুন রূপ নিচ্ছে।
২২ মার্চ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর থেকে বড় আকারে ডলারের আধিপত্য কমতে থাকে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তা আরও জোরদার হয়েছে। রাশিয়ার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জব্দ করার পর বিশ্বের অনেক দেশ ডলার নিয়ে সতর্ক হয়। ডলারের বিকল্প খুঁজতে শুরু করে দেশগুলো।
এশিয়া টাইমসের এক বিশ্লেষণে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মার্কিন ডলারের রিজার্ভ ১১ শতাংশে নেমে আসে। এক বছর আগে তা ছিল ২১ শতাংশ। একই সময়ে ব্যাংকটির চীনা মুদ্রা আরএমবির রিজার্ভ ১৩ থেকে ১৭ শতাংশে পৌঁছেছে।
অন্যদিকে ২০০২ সাল থেকে ডলারের বিকল্প অনুসন্ধানকারী দেশগুলো নিজেদের সোনার রিজার্ভ বাড়িয়েছে। রাশিয়ার বর্তমানে সোনার রিজার্ভ ১ হাজার ৮৭৬ টন, চীনের ১ হাজার ৪৪৮ টন, তুরস্কের ৫৬২ টন, ভারতের ৪০০ টন, কাজাখস্তানের ৩২৩ টন এবং সৌদি আরবের ১৮০ টন। অর্থাৎ সংকটে এসব দেশ অন্য দেশের সঙ্গে সোনার বিপরীতে লেনদেন করতে পারবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভারত-রাশিয়া নিজেদের মুদ্রায় বাণিজ্য করতে সম্মত হয়েছে। ভারতে রাশিয়ার রপ্তানি যেহেতু বেশি, তাই নিজেদের অতিরিক্ত রুপি ভারতের বিভিন্ন করপোরেট বন্ড মার্কেটে সেই অর্থ বিনিয়োগ করবে রাশিয়া। তা ছাড়া, চলতি বছর রাশিয়ায় ২০০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করবে ভারত, যা গত বছরের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে যেসব দেশ সম্মত হয়নি, সেসব দেশ বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৭৬ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। যুদ্ধ শুরুর পর এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মধ্যে নিজেদের মুদ্রায় লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে।
এশিয়া টাইমসের বিশ্লেষক ডেভিড পি গোল্ডম্যান মন্তব্য করেন, পণ্য বিনিময়কে কেন্দ্র করে এশিয়ায় নতুন অর্থব্যবস্থা ইতিমধ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে। এটা ক্রমেই জোরদার হবে। দুর্বল হবে ডলার ও ইউরো।