বয়স তার সাত। এই ছোট্ট শিশুকে সব সময় বেঁধে রাখা হয় গাছের সঙ্গে। প্রায় তিন বছর গাছে বাঁধা জীবন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মানসিক প্রতিবন্ধী কাওসারের। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না উপজেলার আমিনাবাদ ইউনিয়নের কুলসুমবাগ গ্রামের অসহায় কৃষক দম্পতি আব্দুল আজিজ ও খাদিজা বেগম। ধারদেনা করে চলছে তার চিকিৎসা। প্রতিবন্ধী ভাতাও পাচ্ছে কাওছার। পেলে ন্যূনতম চিকিৎসাটুকু করানো সম্ভব হতো বলে দাবি তাঁর বাবা-মায়ের।
তবে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বিষয়টি জানানো হয়নি। তবে দ্রুত কাওসারের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সহযোগিতা করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
জানা গেছে, আব্দুল আজিজ ও খাদিজা বেগম দম্পতির তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে কাওছার তৃতীয়। আব্দুল আজিজ কৃষিকাজ করে সংসার চালান। সংসারে অভাব থাকলেও শান্তি ছিল। কিন্তু গত ৭ বছর আগে জন্ম নেয় কাওসার। সুন্দর চেহারা, সঙ্গে মুখে হাসি লেগে থাকত তার। তিন বছর বয়সেই কথা বলা শুরু করে সে। প্রায় তিন বছর আগে কাওসার উঠানে খেলার সময় মৌমাছি কামড় দেয় তার মাথায়। সেখান থেকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরে স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলেও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। এতে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়। আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ধারদেনা করে ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগান আজিজ। তারপরও শিশুটি সুস্থ হয়ে ওঠেনি। বর্তমানে টাকার অভাবে তার চিকিৎসা বন্ধ।
বাবা আব্দুল আজিজ বলেন, ‘অন্য কোথাও চলে যাওয়ার ভয়ে দুই পা দড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। সে যতক্ষণ জেগে থাকে ততক্ষণই গাছে বেঁধে রাখা হয়। বাঁধন খুলে রাখলে সে অন্যত্র চলে যায়। আবার ঘরের আসবাবপত্র ভেঙে ফেলে। এমনকি তাকে জামা-প্যান্ট পরালে তা ছিঁড়ে ফেলে। কাওসার মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় কথা বলতে পারে না।’
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মামুন হোসেন বলেন, ‘শিশুটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। জেলা ও বিভাগীয় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সহায়তা পাওয়া যায়। শিশুটির চিকিৎসায় সমাজসেবা অফিস সহায়তার জন্য ভোলা জেলা সমাজ কল্যাণ পরিষদে আবেদন পাঠাবে।’
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল নোমান বলেন, ‘বিষয়টি কেউ জানায়নি। এমনকি ছেলেটির বাবা-মাও কখন অফিসে আসেননি। খোঁজ নিয়ে শিশুটির চিকিৎসার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।’