কুড়িগ্রামে সকালে মাঝারি কুয়াশা আর ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। হেমন্তের শুরু থেকেই এ জেলায় নামতে শুরু করেছে তাপমাত্রার পারদ। সারাদিন সূর্যের তাপ থাকলেও সন্ধ্যার পর ঠান্ডা আর সকালের মাঝারি কুয়াশা সৃষ্টি করেছে জেলায় শীতের আমেজ। সকাল এবং সন্ধ্যায় গরম কাপড় জড়াচ্ছেন অনেক। রাতেও গায়ে দিতে হচ্ছে কাঁথা-কম্বল।
গত মাসের মাঝামাঝি থেকে শীতের হিসাবনিকাশ শুরু করেছে জেলার আবহাওয়া ও কৃষি পর্যবেক্ষণাগার। গতকাল সোমবার সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গেল ৭ দিনে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় ২০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বছর এই সময়ে গড় তাপমাত্রা ছিল ২০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বছরের চেয়ে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এবার শীতের তীব্রতা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন আবহাওয়া পর্যবেক্ষকেরা।
২০১৮ সালে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার স্কেলে কুড়িগ্রাম ছিল দ্বিতীয় স্থানে। ওই বছর ৮ জানুয়ারি তাপমাত্রা নামে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গতবারেও জেলার মানুষ প্রচণ্ড শীত অনুভব করেছে।
১৬টি নদ-নদী বেষ্টিত কুড়িগ্রাম জেলার সাড়ে ৪০০ চরাঞ্চলে প্রায় ৫ লাখ মানুষ বাস করেন। কৃষি ও কৃষি শ্রমের ওপর নির্ভরশীল এসব মানুষের পরিবার প্রতি বছর গড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করেন। নিম্নআয়ের এসব মানুষ নিজেদের দুবেলা খাবার জোগাতে যেখানে হিমশিম খায় সেখানে শীতের গরম কাপড় কেনা দুরূহ ব্যাপার।
জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার কচাকাটা ইউনিয়নের শৌলমারী চরাঞ্চলের বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন, প্রতিবছর শীতে আমাদের কষ্ট করতে হয়। এবার শীতের আগেভাগেই শীতের তীব্রতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শীতের জন্য বিকেল থেকে পরদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত গরম কাপড় পরতে হচ্ছে। নতুন গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই তাই পুরোনো কাপড়েই ভরসা করতে হচ্ছে।
কেদার ইউনিয়নের সুবলপাড় এলাকার গৃহিণী তারাবানু বলেন, ‘ঠান্ডা পড়েছে, রাতে কাঁথা গায়ে দিতে হয়।’ একই চিত্র জেলার অন্যান্য এলাকায়ও।
কুড়িগ্রামের কৃষি ও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, জলবায়ুর পরিবর্তন ও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় আগাম শীত অনুভূত হচ্ছে। এবার এ অঞ্চলে গেল কয়েক বছরের চেয়ে শীতের তীব্রতা বেশি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।