পশ্চিম পাশে মেঘনা নদী, দক্ষিণে কাঁচা রাস্তা, পূর্ব পাশে চলাচলের অনুপযোগী বেড়িবাঁধ। তাই উত্তর পাশে থাকা বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে দুই গ্রামের কয়েক হাজার অধিবাসীকে। প্রায় ৫০ বছর ধরে এভাবেই চলছে। নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার তমরদ্দি ইউনিয়নের জোড়খালী ও কোরালিয়া গ্রামের চিত্র এটি।
স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতার আগে-পরে কোনো একসময় কাটাখালী খালের ওপর নির্মিত হয় এই সাঁকো। বংশাণুক্রমে একটি পরিবার এই সাঁকোর দেখভালের কাজ করে। তিন পুরুষ শেষ হয়ে এখন দায়িত্বে আছেন জোড়খালী গ্রামের কামাল উদ্দিন (৫০)। তিনি জানান, এর আগে তাঁর মামা আবদুল জলিল ও তাঁর নানা আবদুল বারেক এই সাঁকো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করেছেন।
কামাল উদ্দিন আরও জানান, সাঁকো তৈরিতে যে খরচ হয়েছে তা তিনি নিজে বহন করেছেন। মাঝেমধ্যে মেরামতের প্রয়োজন হলে তা তিনিই করেন। সাঁকো পার হতে তমরদ্দি হাটের দুই দিন পাঁচ টাকা করে নিয়ে থাকেন। এ ছাড়া বালু বোঝাই বলগেট জাহাজ সাঁকো পার হয়ে ভেতরে যেতে ৪-৫ শ টাকা করে নিয়ে থাকেন। তাতে খরচ উঠে তাঁর লাভ হয়।
সাঁকো পার হয়ে দক্ষিণ পাশে বেড়ির ওপরে দেখা যায় কয়েকটি দোকান। সাঁকোর ছবি তুলতে গেলে কয়েকজন বলে ওঠেন, ‘ভাই, ছবি তুলে কোনো লাভ নেই। অনেক সাংবাদিক অসংখ্যবার এই সাঁকোর ছবি তুলে নিয়ে গেছেন। তাতে কাজের কাজ কিছু হয়নি।’
আলাপ হয় বেড়ির ঢালে থাকা মুদি দোকানি নুর নবীর (৪৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এই সাঁকো পারাপারের সময় দুর্ঘটনার অনেক ইতিহাস রয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে সাঁকো পার হতে গিয়ে খালে পড়ে যায় এক স্কুলছাত্রী। পরে দোকানে বসে থাকা লোকজন আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে। সে তমরদ্দি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়ে।
মো. সেলিম হোসেন (৪০) নামের কোরালিয়া গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, বর্ষা মৌসুমে জরুরি প্রয়োজনে চলাফেরা করা যায় না। কাঁচা রাস্তা হওয়ায় বর্ষায় হেঁটে চলাফেরা করতে হয়। গত বর্ষা মৌসুমে কোরালিয়া গ্রামের নুর নবী নামের এক ব্যবসায়ীর স্ত্রী সন্তান জন্মদানের পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে নবজাতককে সময়মতো উপজেলা সদরে নেওয়া যায়নি। এক দিন পর সেই নবজাতকের মৃত্যু হয়।
তমরদ্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান রাশেদ উদ্দিনের বাড়িও জোড়খালী গ্রামে। সাঁকোর বিষয়ে তিনি জানান, এই সাঁকোটির সঠিক বয়স বলা যাচ্ছে না। তবে ৫০ বছরের কাছাকাছি হবে। একসময় এই সাঁকো পার হয়ে তিনিও তমরদ্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়া লেখা করেছেন। তবে সম্প্রতি উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে একাধিকবার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এই জায়গায় সেতু নির্মাণের জন্য। করোনা মহামারির কারণে হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে হাতিয়া উপজেলা প্রকৌশলী তপন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, কাটাখালী খালের ওপর সেতু নির্মাণের একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এই প্রস্তাব অনুমোদন হয়ে এলে এর প্রাক্কলন তৈরি করে দরপত্র আহ্বান করা হবে।