সুরকার হিসেবে সমর দাস স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ভেসে আসা ‘নোঙ্গর তোলো তোলো, সময় যে হলো হলো’ এবং ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লাল রক্ত লাল’ গান দুটির সুর করে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে মিলেমিশে গেছেন। প্রথম গানটি লিখেছিলেন নঈম গহর, দ্বিতীয়টির রচয়িতা গোবিন্দ হালদার। তাঁর সুর করা মোস্তাফিজুর রহমানের লেখা ‘ভেবো না গো মা তোমার ছেলেরা’ গানটিকেও একই কাতারে ফেলা যায়।
১৯৭২ সালে কলকাতার এইচএমভি (হিজ মাস্টার ভয়েজ) থেকে ‘আজ বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ নামে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ২৬টি গান নিয়ে একটি এলপি রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছিল। সেই রেকর্ডের পরিচালক ছিলেন সমর দাস।
আর এ কথা না বললে তো অন্যায় করা হবে, ১৯৫৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এর সংগীত পরিচালক ছিলেন সমর দাস।
যে কথা বলার জন্য এত ভণিতা, তা হলো, এই কীর্তিমান পুরুষ জন্মেছিলেন পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের নবদ্বীপের বসাক লেনে। বাড়িতে পরিবেশ ছিল সংগীতময়। বাবার কাছ থেকে শিখেছিলেন বেহালা। তারপর নর্থফিল্ড নামে এক মিশনারির কাছ থেকে শিখে নেন পিয়ানো, বাঁশি আর গিটার।
একদিন জিয়া আনসারী তাঁদের প্যারিদাস রোডের বাড়ির ছাদ থেকে বিউটি বোর্ডিংয়ের মাঠের দিকে তাকিয়ে এক দশাসই মানুষকে দেখলেন। তিনি তখন গিটারে তুলছেন সুর। দিনটি ছিল ১৯৫৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। ধূমায়িত চায়ে চুমুক দিয়ে মানুষটি গিটারে তুলেছিলেন ‘আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে’ সুরটি। তারপর উচ্ছ্বসিত হয়ে বলেছিলেন, ‘এমন সুর, হালায় বাজাইয়াও আরাম, হুইন্যাও আরাম!’ লোকটা কে?
আরও পরে যখন বিউটি বোর্ডিংয়ে একুশের অনুষ্ঠান শুরু হলো, লোকে ভরে গেল আঙিনা, তখন জিয়া আনসারী শুনলেন, একপর্যায়ে এই দশাসই লোকটিকে ডাকা হলো স্টেজে। পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো ‘সমর দাস’ নামে। তিনি বাজালেন ‘আজ জ্যোৎস্না রাতে…’।
সূত্র: জিয়া আনসারী, পূর্ণিমার মধ্য বয়সে বিউটি বোর্ডিং, পৃষ্ঠা ৫৬