আজ ১৮ ডিসেম্বর সৈয়দপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হলেও এর দুই দিন পর শত্রুমুক্ত হয় নীলফামারীর সৈয়দপুর।
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা একরামুল হক জানান, স্বাধীনতার ৯ মাসে সৈয়দপুর উপজেলা সদরকে ‘নিউ বিহার’ হিসেবে ঘোষণা করে অবাঙালিরা। এখানে সেনানিবাস থাকার সুবাদে পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে অবাঙালিদের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তায় একশ্রেণির অবাঙালি সৈয়দপুর শহর ছাড়াও জেলার প্রতিটি উপজেলায় প্রচুর লুটতরাজ ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। যার স্মৃতি সৈয়দপুরে এখনো বিদ্যমান বলে জানান তিনি।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাদের সহায়তায় স্থানীয় অবাঙালিরা বাঙালি পরিবারদের ওপর হামলা চালায়। লাখ লাখ টাকার সম্পদ লুটসহ নারী নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগ করে।
এ ঘটনায় নীলফামারী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দিনাজপুর জেলার খানসামা, চিরিরবন্দর, পার্বতীপুর এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে সৈয়দপুর শহর ঘেরাও করার উদ্যোগ নেয়। ফলে বাঙালি ও অবাঙালিদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া শুরু হয়। সৈয়দপুর শহরের বাঙালিদের উদ্ধারের জন্য অস্ত্র হাতে এগিয়ে আসেন চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি ইউপি চেয়ারম্যান মাহাতাব বেগ। অবাঙালি ও খান সেনাদের সঙ্গে গোলাগুলির একপর্যায়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে শহীদ হন। তিনিই সৈয়দপুরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ।
সৈয়দপুরে যুদ্ধকালীন সময়ে কত লোককে যে হত্যা করা হয়েছে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান আজও পাওয়া যায়নি। তবে ওই দিন পুরো শহরে তিন হাজারেরও বেশি মানুষ হত্যা করা হয়। ইতিহাসে এটি একটি বড় গণহত্যা।
১৮ ডিসেম্বর ভোরে ভারতের হিমকুমারী ক্যাম্প থেকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে ট্যাংকবহর নিয়ে শহরের ওয়াপদা এলাকায় অবস্থান নেয়।