ছুটিছাঁটা পেয়ে মানুষ কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে ভিড় জমিয়েছে কদিন। মানুষ ছাড়াও সাগরতীরে ভিড়েছে ডলফিন আর কচ্ছপও। কিন্তু তারা ছিল মৃত। সমুদ্রের সম্পদ এসব প্রাণী কেন মারা যাচ্ছে, বাস্তুসংস্থানে এর প্রভাব কী হবে—এখন এমন প্রশ্ন বিজ্ঞানীদের কপালে ভাঁজ ফেলছে। এই ভাঁজটা আসলে সব মানুষের কপালেই পড়া উচিত। কেননা, মানুষ পরিবেশ কিংবা বাস্তুসংস্থানের বাইরের কোনো প্রাণী নয়। বাস্তুসংস্থান চক্রের একটি শিকল ভেঙে গেলে যে ভয়াবহ পরিণতি হবে পৃথিবীর, তা হয়তো আমরা অনেকে বুঝতে পারি না। আমাদের সবারই দায়িত্ব প্রকৃতিকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া।
রোববার, সকাল সাড়ে ১০টা। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের হিমছড়ি এলাকায় একটি ডলফিন দেখতে পান সমুদ্রবিজ্ঞানীরা। সেটি ছিল মৃত ইরাবতী ডলফিন। এ ছাড়া হিমছড়ি থেকে টেকনাফ সৈকতজুড়ে কয়েকটি মৃত কচ্ছপ ভেসে আসতে দেখা যায়। সেদিনই এ নিয়ে আজকের পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
চলুন, আরেকটু পেছনে ফিরে দেখা যাক। ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি সুগন্ধা, হিমছড়ি ও ইনানী সৈকতে পরপর দুটি ইরাবতী ও একটি হ্যাম্পব্যাক প্রজাতির ডলফিন এবং একটি বিপন্ন প্রজাতির স্তন্যপায়ী পরপইস ভেসে আসে। ১৪ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ১২ দিনে ৭৫টি অলিভ রিডলি প্রজাতির স্ত্রী কচ্ছপ ভেসে আসে, আর এই সবগুলোর পেটেই ডিম ছিল। শুধু গত বৃহস্পতিবারেই মেরিন ড্রাইভ সড়কের সোনারপাড়া থেকে টেকনাফের হাজমপাড়া এবং সোনাদিয়া উপকূলে ২৪টি মৃত কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতেও এমন ঘটনা বিরল নয়। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ইনানীর হোটেল রয়েল টিউলিপ-সংলগ্ন সৈকতে একটি মরা ইরাবতী ডলফিন ভেসে এসেছিল। ৩০ মার্চ সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে একটি মরা ইরাবতী পাওয়া যায়। ১৮ এপ্রিল রাতে কলাতলী সৈকতে একটি মরা তিমি ভেসে আসে। ২০২২ সালের ২৩ আগস্ট ও ২০ মার্চ ইনানী সৈকতে মরা ডলফিন ভেসে আসে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসের শুরুতেও টেকনাফ সৈকতে দুটি মরা ডলফিন ভেসে এসেছিল। ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল পরপর দুই দিনে হিমছড়ি সৈকতে দুটি মরা তিমি ভেসে এসেছিল।
সমুদ্রবিজ্ঞানীদের প্রাথমিক ধারণা, বেশির ভাগ সামুদ্রিক প্রাণী জেলেদের জালে আটকা পড়ে এবং মাছ ধরার ট্রলার ও জাহাজে ধাক্কা খেয়ে বা অন্য কোনোভাবে আঘাত পেয়ে মারা যায়। এদিকে সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষার দায়িত্ব বন বিভাগের হলেও দক্ষ জনবল না থাকার কথা স্বীকার করে নিয়েছে তারা। এ ব্যাপারে অবশ্য তারা সাহায্য নিচ্ছে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের।
সংশ্লিষ্টরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন, এটা ভালো কথা। কিন্তু এভাবে নিয়মিত সামুদ্রিক প্রাণী মারা পড়ার ঘটনা স্বাভাবিক নয়। গবেষকেরা এর মূল কারণ খুঁজে পেতে পেতে সমুদ্রের সাধারণ পর্যটকদের দায়িত্বটা মনে করে ফেলা উচিত—প্লাস্টিক বা অন্য যেকোনো বর্জ্য দিয়ে সমুদ্রসৈকত নোংরা করা যাবে না। বিষাক্ত বর্জ্যেও মারা যায় সাগরের বাসিন্দারা।