কীভাবে হরিদাস ভট্টাচার্যের সঙ্গে কানন দেবীর বিয়ে হলো, সে গল্প এখানে নয়। শুধু বলে রাখি, ভট্টাচার্য মশাই তখন গভর্নরের এডিসি। ‘অনন্যা’ ছবির লোকেশন হলো পলতায়, সরকারি অনুমতি লাগবে। সে ব্যবস্থাই করে দিয়েছিলেন হরিদাস ভট্টাচার্য। তারপর টেলিফোনে আলাপ বাড়ল। বিয়ে হলো।
ভট্টাচার্য মশাই তখন উচ্চ সমাজের নায়ক। মেয়েরা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারলে বর্তে যায়। এ নিয়ে মন খারাপ থাকত কানন দেবীর। কিন্তু সে আঁধার কেটেও যেত। দুজনের মধ্যে মিল-অমিল দুই-ই ছিল, কিন্তু বোঝাপড়া ছিল চমৎকার।
‘মেজদিদি’ ছবির কাজ শুরু হলো। শরৎচন্দ্রের লেখা উপন্যাসটি জনপ্রিয় হয়েছিল। চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন ভট্টাচার্য। যুক্ত হয়েছিলেন ‘মেজদিদি’ ছবিটির সঙ্গে। বার্ড কোম্পানিতে কাজ করার সময়ই ছবির সিনারিও লিখে ফেলেছিলেন তিনি। তিনি লেখকের গল্প খুব একটা পরিবর্তন করতে চাইতেন না। বলতেন, ‘প্রতিভা ও প্রকাশ ক্ষমতায় লেখকের চেয়ে বড় না হলে তাঁর লেখা পাল্টাবার অধিকার কারও নেই।’ সব্যসাচী ছিলেন ‘মেজদিদি’র পরিচালক। সেই ছবিতে মেজদিদির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন কানন দেবী। রেণুকা রায় হয়েছিলেন তাঁর বড় জা। সিনেমাটা তৈরি হওয়ার সময়ই বোঝা যাচ্ছিল, দর্শক ছবিটা নেবে। একজন ডিস্ট্রিবিউটর মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে চিত্রস্বত্ব কিনে নিতে চাইলেন। কিন্তু শরৎচন্দ্রের প্রতি অসাধারণ দুর্বলতার কারণে কানন দেবী চিত্রস্বত্ব বিক্রি করলেন না। সে সময় একদিন হরিদাস ভট্টাচার্য এসে বললেন, ‘বুঝলে, আজ হিলম্যান গাড়িটা বাজি রেখে এলাম নারায়ণ পিকচার্স কোম্পানির কাছে। ওরা বলছে, মেজদিদি হিট করবে। আমি বললাম, অ্যাবসার্ড। তখন হিলম্যান গাড়িটা বাজি রাখা হলো।’
মেজদিদি মুক্তি পাওয়ার পর সত্যিই গাড়িটা নারায়ণ পিকচার্স কোম্পানিকে দিয়ে দিতে হয়েছিল। কারণ, ছবিটা শুধু বক্স অফিসই মাতিয়ে দেয়নি, ১৯৫১ সালের শ্রেষ্ঠ ছবিগুলোর অন্যতম হয়েছিল।
বাজিতে হারার যে এত আনন্দ, তা এই প্রথম অনুভব করলেন ভট্টাচার্য ও কানন দেবী।
সূত্র: কানন দেবী, সবারে আমি নমি, পৃষ্ঠা, ১১৩-১১৫