খুব সাধ ছিল ডাক্তারি পড়ার। সে স্বপ্নই দেখেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। ডাক্তারদের সম্পর্কে একটা ভক্তিভাব ছিল বরাবরই। মনে হতো তখন, ডাক্তাররাই মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু।
কেন এ রকম মনে হতো, তারও কারণ আছে। ছেলেবেলা থেকে যে কজন চিকিৎসককে দেখেছেন তিনি, তাঁদের প্রত্যেকের চেহারা সুন্দর, ব্যবহার মার্জিত, সাধারণ মানুষের চেয়ে একেবারে আলাদা যেন তাঁরা। একধরনের আদর্শবাদ তখনো সুনীলকে ঘিরে ছিল। ভাবতেন, ডাক্তারি পাস করে গ্রামে চলে যাবেন। সেখানে গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াবেন।
তখন খুব বেশি মানুষের পক্ষে পড়াশোনার সুযোগ ছিল না। তাই টাকা থাকলেই ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার কথা ভাবতে পারত না অনেকেই। যখন আইএসসি পাস করলেন সুনীল, তখনই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নটাকে কোরবানি দিলেন। কারণ, পাঁচ বছর ধরে ডাক্তারি পড়ার অর্থের জোগান আসবে কোত্থেকে? সুতরাং স্বপ্নের সলিলসমাধি। পড়তে হবে কলা বিভাগে। যত দ্রুত পাস-টাস করে চাকরিতে ঢোকা যায়!
বাংলা বা ইংরেজিতে ভর্তি হলে কোনো সমস্যা ছিল না। কিন্তু সুনীল নিলেন অর্থনীতি। বাবার আদেশে। বাবা ভাবলেন, অর্থনীতিতে পাস করলে ব্যাংকের চাকরি পাওয়া সহজ হবে।
তাহলে পড়তে হবে নারী বিবর্জিত কোনো কলেজে। সিটি কলেজের অর্থনীতি বিভাগটি নাকি দারুণ! কিছুদিন চলল পড়াশোনা। অর্থনীতির ক্লাসের সঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ক্লাসও হতো। সেটা তো ভালো লাগত। কিন্তু ক্রমেই অর্থনীতির মধ্যে অঙ্ক এসে হাজির হতে শুরু করল। আর তো ভালো লাগে না। একদিন হাতখরচের টাকায় টান পড়ে যাওয়ায় হ্যারল্ড লাস্কির গ্রামার অব পলিটিকস বইটি কলেজ স্ট্রিটের পুরোনো বইয়ের দোকানে বিক্রি করে দেওয়ার পর তিনি বুঝলেন, অর্থনীতি আর পড়া হবে না। এরপর বাংলা বিভাগের ক্লাসে গিয়ে বসে থাকতেন তিনি। বুঝলেন, পাস কোর্সে বিএ পাস করতে হবে। তত দিনে কবিতার সঙ্গে সখ্য জমে উঠেছে।
সূত্র: সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, অর্ধেক জীবন, পৃষ্ঠা ১৩০-১৩১