অনেকেই লেখালেখির ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত থাকেন। কোন পরিবেশ সৃষ্টি করে কীভাবে শিল্পকর্ম বা সৃষ্টিকর্ম তৈরি করবেন, সেটা হয় তাঁদের ভাবনার বিষয়। কিন্তু উইলিয়াম ফকনার সরাসরি বলে দিয়েছেন, ঔপন্যাসিক হওয়ার জন্য যদি কোনো ফর্মুলা থেকে থাকে, তবে তা হচ্ছে নিরানব্বই ভাগ প্রতিভা, নিরানব্বই ভাগ নিয়মানুবর্তিতা, নিরানব্বই ভাগ নিরলস লিখে যাওয়া।
বাংলা সাহিত্য রচনা করতে গিয়ে অনেকেই সামনে রবীন্দ্রনাথকে দেখে চমকে ওঠেন। সাহিত্যের যে হিমালয় তিনি তৈরি করেছেন, তার পাদদেশে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকেন কীভাবে এই চূড়া ডিঙিয়ে যাব? এ ভাবনাই অনেককে লেখার কাজে নিরুৎসাহিত করে দেয়। ফকনার বলছেন, সমসাময়িক কিংবা পূর্ব প্রজন্মের লেখকদের চেয়ে ভালো লেখা লিখতে হবে, এ রকম ভেবে যদি কেউ লিখতে বসে, তাহলে সেটা হবে নিষ্ফলা সৃষ্টির মাঠ। কিছুই সেখানে জন্মাবে না। লিখতে গিয়ে অন্যকে ভেবে বিস্ময় প্রকাশের সময় লেখকের হাতে নেই। এমনকি নিজের সাহিত্যকর্ম চালিয়ে যাওয়ার জন্য চুরি-ডাকাতি-ভিক্ষাবৃত্তি, ঋণ করা, কোনো কিছুকেই নীতিবিবর্জিত কাজ বলে মনে করবেন না লেখক। একজন লেখক শুধু তাঁর শিল্পকর্মের কাছেই দায়বদ্ধ। একজন লেখকের লেখালেখি বা সাহিত্য সৃষ্টির জন্য প্রয়োজন কাগজ-কলম, খাবার, তামাক আর সামান্য হুইস্কি। সময় নেই, অর্থ নেই–এসব দোহাই দিয়ে যে লেখক নিজেকে বোকা বানাতে চান, ধরে নিতে হবে তিনি প্রথম সারির লেখক নন এবং হ্যাঁ, শিল্পচর্চার সঙ্গে পরিবেশের কোনো যোগসাজশ নেই।
সাফল্য লাভ কিংবা টাকা কামানোর চিন্তা করার মতো কোনো সময় মহৎ লেখকের থাকে না। নবীন লেখকের শিক্ষা নিতে হবে নিজের ভুল থেকে, যেখানে ঠেকবে, সেখান থেকেই শিখবে সে। মহৎ কোনো লেখক বিশ্বাস করেন, তাঁকে উপদেশ দেওয়ার মতো এত ভালো ওস্তাদ কোথাও নেই, তিনি নিজেই সর্বেসর্বা।
সূত্র: মিজান মল্লিক অনূদিত ‘নন্দিত লেখক কবির সাক্ষাৎকার’,