হোম > ছাপা সংস্করণ

আদর্শ নেতার গুণাবলি

ড. মো. আবদুল কাদির

মানবসমাজের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য বা সাফল্য অর্জনের জন্য নেতৃত্বের ভূমিকা ও গুরুত্ব অপরিসীম। নেতাদের মেধা, যোগ্যতা ও যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত যেমন একটি জাতিকে সাফল্যের উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারে, তেমনি অদক্ষ, মেধাহীন ও দুর্বল নেতৃত্বের কারণে একটি জাতির পতন অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। ইতিহাসের সব যুগেই সমাজে এমন একশ্রেণির মানুষের অবদান পাওয়া যায়, যাঁরা দেশ, জাতি ও সমাজ পরিচালনার কাজে ব্রতী হন, সমাজের সার্বিক দায়িত্ব পালন করেন, মানবগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করেন এবং নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব আঞ্জাম দেন।

নেতৃত্বের যোগ্যতা মহান আল্লাহর দান। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এবং তাদের মধ্যে কিছু লোককে অপর কিছু লোকের ওপর মর্যাদা দিয়েছি, যাতে তারা একে অপরকে সেবক হিসেবে গ্রহণ করতে পারে।’ (সুরা যুখরুফ, আয়াত: ৩২)

সুতরাং আল্লাহ তাআলা মানুষের মধ্যে যাঁদের বিশেষ মর্যাদা ও দায়িত্ব দেন, তাঁরাই অন্যদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কাজ আদায় করে নেন এবং সমাজ পরিচালনায় ভূমিকা রাখেন। তাই মানবসমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং প্রতিটি মুহূর্তে নেতৃত্বের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

যিনি নেতা হবেন, তাঁর প্রতি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও রায় থাকতে হবে। নেতা হওয়ার অর্থ প্রকৃতপক্ষে জনগণের সেবক হওয়া—যেমনটি হাদিসে এসেছে। দেশ ও জাতির কল্যাণে তাঁকে কাজ করতে হবে। জনগণের সুখে-দুঃখে পাশে থেকে তাদের আস্থা অর্জনের মধ্য দিয়ে সব ধরনের সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। নেতৃস্থানীয়দের জন্য এমন নির্দেশনাই দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী, নিশ্চয়ই আমি আপনার প্রতি পূর্ণ কোরআন পরম সত্যতার সঙ্গে এ জন্যই নাজিল করেছি, যাতে আপনি আল্লাহর দেখানো পথে মানুষের কল্যাণে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন (ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন)। এবং আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষাবলম্বনকারী হবেন না।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০৫)

ইসলামে যেমন নেতৃত্বের কথা বলা হয়েছে, তেমনি সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব তৈরির প্রতিও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, যিনি মুসলিম সমাজের নেতা নির্বাচিত হবেন, তিনি হবেন আল্লাহর প্রতিনিধি; আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে ইনসাফের বিধান প্রতিষ্ঠা করাই তাঁর প্রধান কর্তব্য। তাই তিনি নেতা হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন না। জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পারেন না। অসৎ পথে চলতে পারেন না। দুর্নীতিতে জড়াতে পারেন না। সুদ-ঘুষ নিতে পারেন না। কোনো নাগরিকের প্রতি জুলুম করতে পারেন না। স্বেচ্ছাচারিতার নীতি গ্রহণ করে জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলতে পারেন না। জনগণের জন্য ক্ষতিকর আইন প্রণয়ন করতে পারেন না। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে পারেন না। তাই নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সৎ ও যোগ্য লোকের পক্ষেই রায় দিতে হবে। অন্যথায় অযোগ্য নেতার অন্যায়-অনাচারের গুনাহের দায়ভার তাঁর পক্ষে রায় প্রদানকারীদেরও বহন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের এই নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তোমরা যোগ্য লোকদের হাতেই আমানত সোপর্দ করো।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ৫৮)

সুতরাং নেতৃত্বের পবিত্র আমানত রক্ষা করতে হলে নেতার বেশ কিছু গুণাবলি থাকা জরুরি। তাঁকে হতে হবে উন্নত চরিত্রের অধিকারী। বিনয়ী, জ্ঞানী, বিবেকবান, ক্ষমতার প্রতি নির্মোহ ও সমাজসচেতন। মানুষকে কল্যাণের পথে আহ্বানকারী। অন্যায়, অপরাধ ও মন্দ প্রতিহতকারী। মানবপ্রেম ও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তিনি কাজ করবেন। অধীনদের ভালো কাজের উৎসাহ দেবেন এবং মন্দ কাজে নিষেধ করবেন। নিজেও অন্যায়, অপরাধ, দুর্নীতি ও মন্দ কাজ থেকে মুক্ত থাকবেন এবং অন্যদেরও মুক্ত রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

ইসলাম একজন সৎ ও যোগ্য নেতার আরও যেসব গুণাবলি অপরিহার্য মনে করে তা হলো—তিনি হবেন একজন আদর্শ বিচারক। সমাজ ও রাষ্ট্রে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন। আত্মীয়স্বজন এমনকি মা-বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ এলেও সত্য প্রতিষ্ঠায় বিচ্যুত হবেন না। পবিত্র কোরআনের নির্দেশনাও তা-ই। মহানবী (সা.) এমন ন্যায়পরায়ণ শাসকদের কিয়ামতের বিভীষিকাময় মুহূর্তে আল্লাহর আরশের নিচে ছায়া দেবেন বলে হাদিসে উল্লেখ করেছেন।

তাঁকে হতে হবে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনের বাস্তবায়নে হতে হবে একনিষ্ঠ। যেমন মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মদের কন্যা ফাতেমাও চুরি করত, তাহলেও অবশ্যই আমি তার হাত কেটে দিতাম।’ (বুখারি ও মুসলিম)

তাঁকে হতে হবে সত্যবাদী। যে ব্যক্তি কথায় ও কাজে সত্যাশ্রয়ী হয়, আল্লাহ তাআলা তার যাবতীয় আমল সংশোধন করে দেন। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য কথা বলো। আর তোমরা যদি সত্য কথা বলো, আল্লাহ তাআলা তোমাদের কর্মসমূহ সংশোধন করে দেবেন এবং তোমাদের যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সুরা আহযাব, আয়াত: ৭০-৭১)

তাঁকে হতে হবে দায়িত্বশীল। জনগণের কল্যাণ কামনায় সর্বদা নিবেদিতপ্রাণ থাকতে হবে। তাদের খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানসহ সব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্ব অবহেলাকারী নেতাকে জাহান্নামে উপুড় করে নিক্ষেপ করার কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

তাঁর মধ্যে থাকবে জবাবদিহির গুণ। তিনি জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করবেন এবং পরকালে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর বোধ জাগরূক রাখবেন। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর (রা.) বলেছিলেন, ‘ফোরাতের তীরে একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায়, তবে আমাকে সে জন্যও জবাবদিহি করতে হবে।’ এক হাদিসে এসেছে, ‘সাবধান, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব ইমাম কিংবা নেতা যে বিষয়ের দায়িত্বশীল, তিনি তার অধীনদের বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবেন।…’ (বুখারি)

এসব বৈশিষ্ট্য ও গুণ যখন সমাজের নেতা, জনপ্রতিনিধি, শাসক ও নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা ধারণ করবেন, তখন সমাজ থেকে অন্যায়, অনাচার, দুর্নীতি, দুঃশাসন ও জুলুম বিতাড়িত হবে এবং সুশাসন, ন্যায়বিচার, উন্নত, সমৃদ্ধ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে।

লেখক: অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, আরবি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ