নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় ইটবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় বাবা-মেয়ে নিহত হয়েছেন। একটি অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন তাঁরা। সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। ট্রাক তাঁদের পাঠিয়ে দিল অজানা এক জগতে।
যে বাবা ও মেয়েকে পিষে দিল ট্রাক, শুধু তাঁদের কথাই এখানে বলছি না। সড়কপথে দুর্ঘটনা যেন আমাদের ললাটলিখন হয়ে উঠেছে। দুর্ঘটনা হতেই পারে, কিন্তু তা যখন সামগ্রিকভাবে একটা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার পুঞ্জীভূত প্রকাশ হয়ে দাঁড়ায়, তখন বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হয়। যাঁরা যন্ত্রযান চালাচ্ছেন, আদতে সড়ক এবং সড়কে চলাচলকারী অন্যান্য যানবাহন ও মানুষ সম্পর্কে তাঁদের ধারণা কী, সে সম্পর্কে গবেষণা হওয়া উচিত। রাস্তায় যিনি যানচালকের আসনে বসেছেন, তাঁর চোখ-কান খোলা রাখলেই শুধু চলবে না, তাঁর মনও খোলা রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, শুধু নিজের দোষেই দুর্ঘটনা ঘটবে না, যেকোনো কারণেই হঠাৎ করে সাধারণ চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে এবং দুর্ঘটনা ঘটার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সেদিকে রাখতে হবে সতর্ক নজর। যতবার যন্ত্রযান নিয়ে বাইরে বের হবেন একজন চালক, ততবারই তাঁর এই সচেতনতা থাকতে হবে। মানুষের জীবন-মরণ চালকের হাতে রয়েছে, এ কথা উপলব্ধি না করলে গাড়িচালক হওয়া উচিত নয়।
যেকোনো গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে, এ কথাটা অনেক ক্ষেত্রে মানা হয় না; বিশেষ করে বাস ও ট্রাকচালকদের মধ্যে এখনো সেই অভ্যাসটা রয়ে গেছে, যেখানে একজন হেলপার কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই হয়ে উঠতে পারেন বাস বা ট্রাকচালক। ঢাকা মহানগরীতে যাঁরা চলাচল করেন, তাঁরা পাশাপাশি দুটো বাসের গা ঘেঁষাঘেঁষি করে চলার প্রতিযোগিতা অহরহ দেখে থাকেন। কী ভয়াবহ সে প্রতিযোগিতা, সেটা সামনাসামনি চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। এমন ঘটনাও ঘটেছে, পাশাপাশি শরীরে শরীর লাগিয়ে চলতে থাকা দুটো বাসের মাঝখানে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে গেছেন কোনো মানুষ এবং একবার তো এই প্রতিযোগিতার ফলস্বরূপ একটি কাটা হাত ঝুলছিল বাসের দরজায়!
চালকের লাইসেন্স থাকবে না, এটা কোনো সভ্য দেশের রীতি হতে পারে না। এমনকি যেখান থেকে লাইসেন্স বের করা হয়, সেখান থেকেও সব নিয়ম মেনে লাইসেন্স বের করা হয় কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে।
সড়কপথে দুর্ঘটনায় লাশের মিছিল বাড়তেই থাকবে, যদি না এ ব্যাপারগুলোতে কঠোরতা প্রয়োগ করা হয়। মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকদের মধ্যে নিজ স্বার্থ বিবেচনা করে যখন অন্যায়ভাবে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তির পাশে দাঁড়ানো হয়, তখনই আসলে সড়কের আইনশৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যায়। সড়কপথে চলাচলের রীতিনীতি না জানা চালকের হাতে সাধারণ যাত্রী কিংবা পথচারী অকারণে দিনের পর দিন প্রাণ দিয়ে যাচ্ছেন, এটা কোনো কাজের কথা নয়। একেকটা মৃত্যু একেকটা সংসারকে ধ্বংস করে দেয়, নিঃস্ব করে দেয়। সেই ভয়াবহতা অনুভব করা না হলে এর ব্যাপ্তি বোঝা যাবে না।