হোম > ছাপা সংস্করণ

জমিদার নেই, আছে বাড়িটি

চয়ন বিকাশ ভদ্র

ময়মনসিংহ জেলার একটি প্রাচীন স্থাপনা মুক্তাগাছা রাজবাড়ি। কালের পরিক্রমায় রাজবাড়িটি আজ জরাজীর্ণ। তবে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকা প্রায় ৯০০ বছরের পুরোনো এই রাজবাড়ি আজও মানুষকে টানে। ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনুসন্ধানকারীরা প্রায়ই মুক্তাগাছা রাজবাড়িতে আসেন নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে।

ময়মনসিংহ শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে মুক্তাগাছা উপজেলায় রাজবাড়িটির অবস্থান। আচার্য চৌধুরী জমিদার বংশ ১২ শতকে মুক্তাগাছা শহরের গোড়াপত্তন করে। এই বংশের প্রথম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরী ছিলেন বগুড়ার বাসিন্দা। তিনি মুর্শিদাবাদের দরবারে রাজস্ব বিভাগে কর্মরত ছিলেন। নবাবের অত্যন্ত আস্থাভাজন এই কর্মকর্তা ১১৩২ সালে তৎকালীন আলাপসিং পরগনার বন্দোবস্ত নেন। বর্তমান মুক্তাগাছা শহরসহ মুক্তাগাছা উপজেলার বেশির ভাগ এলাকাই ছিল আলাপসিং পরগনার অন্তর্ভুক্ত।

ইতিহাসবিদদের মতে, শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর চার ছেলে রামরাম, হররাম, বিষ্ণুরাম ও শিবরাম বগুড়া থেকে আলাপসিংয়ে এসে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেন। সে সময়ে আলাপসিং পরগনায় খুব একটা জনবসতি ছিল না। চারদিকে ছিল অরণ্য আর জলাভূমি। শ্রীকৃষ্ণ আচার্যের চার ছেলে ব্রহ্মপুত্র নদের শাখা নদী আয়মানের তীরবর্তী আলাপসিং পরগনার বিনোদবাড়ির ঘাটে নৌকা ভিড়িয়ে ছিলেন। তখনকার রেওয়াজ ছিল, রাজা-বাদশারা এলাকায় এলে প্রজারা তাঁদের সাধ্যমতো নজরানা দিতেন। মুক্তা নামে একজন দরিদ্র কর্মকার জমিদার শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীকে নিজ হাতে তৈরি পিতলের একটি ‘গাছা’ নজরানা দিয়েছিলেন। ‘গাছা’ হচ্ছে দীপাধার বা প্রদীপ। শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীকে সব নজরানার মধ্যে পিতলের গাছাই বেশি আকর্ষণ করেছিল। তাই তিনি ‘মুক্তা’ আর ‘গাছা’ শব্দ দুটি একত্র করে বিনোদবাড়ির নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘মুক্তাগাছা’।

রাজবাড়ির মূল ফটক বা সিংহ দরজা দিয়ে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে বেশ কিছু খালি ফোকর। রাজপ্রাসাদের আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে ফটকের দুই পাশে করিডরের পাশে সিমেন্ট, চীনামাটি ও মূল্যবান পাথরে তৈরি তিনটি করে মোট ছয়টি সিংহমূর্তি ছিল। সিংহ দরজা পেরিয়ে একটু এগোলে একটি মন্দির চোখে পড়বে। সম্প্রতি মন্দিরটির সংস্কার করা হয়েছে। এখানকার কষ্টিপাথরের বিগ্রহ চুরি হয়ে গেছে আগেই। শূন্যই পড়ে আছে পূজামণ্ডপ। মণ্ডপের মেঝেতে মূল্যবান মার্বেল টাইলস বিছানো ছিল। লোপাট হয়েছে সেগুলোও। চুরি হয়েছে দরজা-জানালার কপাটও।

রাজবাড়ির ভেতরে আছে জমিদারের মায়ের ঘর, অতিথি ঘর ও সিন্দুক ঘর। সিন্দুকের ভগ্নাবশেষ আজও রয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ আচার্যের উত্তরপুরুষ জগৎ কিশোর আচার্য চৌধুরী বেশ জ্ঞানচর্চা করতেন। তাঁর ছিল একটি ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার, নাম ‘জিতেন্দ্র কিশোর গ্রন্থাগার’। ধারণা করা হয়, তৎকালীন পূর্ববঙ্গের সবচেয়ে বড় গ্রন্থাগার ছিল এটি। এখানে বইয়ের সংগ্রহ ছিল প্রায় ১০ হাজার। তালপাতায় লিখিত পুঁথি থেকে শুরু করে এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকার মতো অনেক দুর্লভ বইয়ের সংগ্রহ ছিল এখানে। অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হয়েছে অনেক বই। স্বাধীনতার পর এই গ্রন্থাগার থেকে বইগুলো মুক্তাগাছা সংগ্রহ নামে বাংলা একাডেমিতে স্থানান্তর করা হয়। এই জমিদার বংশের আরেক উত্তরপুরুষ ভূপেন্দ্র ছিলেন নাট্যপ্রিয় মানুষ। তাঁর নামানুসারে নির্মাণ করা হয়েছিল ভূপেন্দ্র রঙ্গপীঠ। এটি একটি ঘূর্ণায়মাণ মঞ্চ।

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ