পর্বতের পর পর্বত বরফে ঢাকা। যত দূর চোখ যায় সাদা আর সাদা। সফেদ চাদর বিছিয়ে রাখা হয়েছে যেন। এমন দৃশ্যের দেখা মিলবে ইউরোপের আল্পস পর্বতমালায়। কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে সেখানে এখন সবুজ গাছের ছড়াছড়ি। কোথাও কোথাও দেখা যায় ফুলের বাগান। সম্প্রতি স্যাটেলাইট থেকে তোলা আল্পসের ছবি সে কথাই বলছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ চিত্র জলবায়ু বিপর্যয় নিয়ে শঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে। উষ্ণ হচ্ছে পৃথিবী। আল্পস পর্বতমালায় অসময়ে দেখা যাচ্ছে বৃষ্টি। এসব কারণে আগের চেয়ে দ্রুত গলছে আল্পসের বরফ। অনুকূল পরিবেশ পেয়ে জন্ম নিচ্ছে তৃণভূমি, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। যেখানে একসময় ছিল শুভ্রতার ছোঁয়া, এখন সেখানে ছাতার মতো ছড়িয়ে আছে সবুজ।
সম্প্রতি এ নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সুইজারল্যান্ডের ব্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানান, ১৯৮৪ সালের পর এ পর্যন্ত আল্পসের বৃক্ষরেখার ওপরে সবুজ এলাকার আয়তন ৭৭ শতাংশ বেড়েছে। গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক সাবিন রাম্ফ বলেন, বরফ বিলীন হয়ে সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছের নতুন ‘কলোনি’ হচ্ছে। এটি এ অঞ্চলে ‘অনেক বড়’ পরিবর্তন। এর প্রভাব পড়বে বৈশ্বিক জলবায়ুতে।
বিশ্বে এ ধরনের পর্বত আগের চেয়ে দ্বিগুণ হারে গলছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান। প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে সবুজের কারণে কমবে কার্বন। কিন্তু এতে করে হিমায়িত অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য বিলীন হবে। এ ছাড়া সূর্যের রশ্মি প্রতিফলিত হওয়ার মাত্রা কমে যাবে। একে বলা হয় ‘অ্যালবেডো প্রভাব’।
রাম্ফের মতে, এত উঁচুতে এ ধরনের গাছপালা জন্ম নিলে আল্পাইনের বিশেষ গাছ হুমকির মুখে পড়বে। এসব উদ্ভিদ কঠিন পরিস্থিতিতেও ভালোভাবে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। কিন্তু অন্য গাছের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নয়। এরই মধ্যে ১ হাজার ৭০০ মিটারের মতো জায়গা হারিয়েছে আল্পস। বরফে ঢাকা এসব পর্বত এভাবে জায়গা হারাতে থাকলে ধীরে ধীরে আরও কমে যাবে অ্যালবেডো প্রভাব। এতে করে সূর্যের তাপের একটা বড় অংশ থেকে যাবে পৃথিবীতেই। এতে আরও দ্রুত গলবে বরফ। একসময় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আরও বেড়ে গিয়ে তলিয়ে যাবে নিম্নাঞ্চল। বিরূপ আচরণ শুরু করবে বৈশ্বিক আবহাওয়া।