কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের সুজানেরকুটি গ্রাম নতুনভাবে পরিচিতি পেয়েছে। আশপাশের এলাকার মানুষ গ্রামটিকে এখন কমলার গ্রাম নামেই চেনে। এই গ্রামের অনেক পরিবার কমলাবাগান করে ভাগ্য বদল করেছে।
সুজানেরকুটি গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, বাগান ও বাড়ির আঙিনায় থোকায় থোকায় ঝুলছে কমলা। বিভিন্ন আকারের কমলার ভারে নুয়ে পড়া ডালগুলো বাঁশ দিয়ে উঁচু করে রাখা হয়েছে। কমলাগাছের এমন দৃশ্য হাসি ফুটিয়েছে চাষিদের। কমলা বিক্রি করে অনেক পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে।
সুজানেরকুটি গ্ৰামের কৃষক আবুবকর সিদ্দিক ও তাঁর ছোট ভাই আবু হোসেন ছয় বছর আগে বাজার থেকে চারটি কমলার চারা কিনে বাড়ির আঙিনায় রোপণ করেন। তিন বছর পর এতে ফল ধরা শুরু হয়। প্রতিটি গাছে ৭০ থেকে ৯০টি ফল ধরে। তাঁদের দেখে প্রতিবেশী সাইদুল হক, মহর উদ্দিন, মেহের আলী, নাজিম উদ্দিন, শাখাওয়াত হোসেন, মজনু মিয়া, আলী হোসেনসহ ২০ জন বাড়ির আঙিনা ও পতিত জমিতে কমলার চাষ শুরু করেন। এভাবেই কমলার চাষ ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্ৰামে।
২০১৯ সালে আবুবকর সিদ্দিক শিমুলতলা বাজারের পাশে কমলার বাগান শুরু করেন। তাঁর বড় ছেলে নুর আলমের বন্ধু যশোরের মহেশপুর গ্ৰামের আশরাফুল ইসলামের নার্সারি থেকে দার্জিলিংয়ের সাদকি জাতের কমলার চারা সংগ্রহ করেন। বাড়ির পাশের ২৮ শতক জমিতে ১৩৫টি কমলাগাছ লাগান। সামান্য রাসায়নিক সারের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে জৈবসার দেন। ২৮ মাস পর ফুল আসা শুরু হয়। এখন ফল পরিপুষ্ট।
আবুবকর সিদ্দিকের বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে গ্রামের অনেকেই বাগান করেছেন। কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই গ্ৰামের মাইদুল হক, জহির উদ্দিনসহ ১০ জন বলেন, ‘আমরাও বাগান করেছি।
তবে এখনো ফল আসেনি।’
সুজানেরকুটি গ্রামের কমলাচাষি আহাদ আলী বলেন, ‘শুধু এলাকার মানুষ নয়, দূরদুরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসছেন বাগান দেখতে। আমার কমলা চাষ খুবই সাড়া ফেলেছে। লোকজন এখানে এসে আকৃষ্ট হচ্ছেন গাছের সৌন্দর্যের প্রতি।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, উপজেলার মাটি লেবুজাতীয় ফল চাষের জন্য উপযোগী। এখানকার আবহাওয়া এবং মাটি অনুকূলে থাকায় প্রচুর পরিমাণে কমলার চাষ করা সম্ভব। ওই কৃষকের পাশাপাশি গ্ৰামের সবাই কমলা চাষে এখন আগ্রহী। আবাদ বৃদ্ধির জন্য বাগান করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাগানে তিন-চার বছরের মধ্যে ফল পাওয়া যায়।