মোবারক হোসেন খান ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁয়ের ছেলে। তাঁদের কলেজে বার্ষিক সংগীত প্রতিযোগিতা হবে। বন্ধুরা তাঁকে অনুরোধ করেছে, তিনি যেন গানের প্রতিযোগিতায় নাম দেন। এই প্রতিযোগিতায় একটা শর্ত আছে। রেকর্ড বা ছায়াছবির গান করা যাবে না। এত অল্প সময়ে কার কাছে গিয়ে গান শিখে আসবেন, ভেবে বের করতে পারলেন না মোবারক হোসেন খান।
তখন নিজেই সুর করবেন বলে একটা গান বেছে নিলেন মোবারক। তারপর সেই সুরে গানটা গাইতে লাগলেন বাড়িতে। সুর তো আর গুনগুন করা যায় না, দরাজ গলায়ই গাইতে হয় গান। তাই মোবারক হোসেন খানের পাশের ঘরে থাকা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁকে যে প্রতিদিনই কতবার সে গান শুনতে হয়!
মজার ব্যাপার হলো, সেই সংগীত প্রতিযোগিতায় ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁও একজন বিচারক। একের পর এক গান হচ্ছে। অবশেষে মোবারক হোসেন খানের নাম ঘোষণা করা হলো। ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ তখন বেরিয়ে গেলেন হলঘর থেকে। বাইরে বারান্দায় গিয়ে সিগারেট ধরালেন। একজন ছাত্র এসে বলল, ‘ওস্তাদজি, গান শুরু হয়ে গেছে।’
আয়েত আলী খাঁ বললেন, ‘শুনেছি বাবা। ওর গান আমি সারা দিনই শুনছি। কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। আর না শুনলেও চলবে।’
এরপর কী হলো? এরপর ওস্তাদ বললেন, ‘ও তো আমার ছেলে। বিচারকমণ্ডলীতে আমার থাকাও ঠিক নয়। অন্য বিচারকেরাই তার নম্বর দেবেন।’
তিনি যে একজন নিরপেক্ষ বিচারক ছিলেন, এটা তারই একটা উদাহরণ। আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। এক কিশোরী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক ঘরোয়া অনুষ্ঠানে যখন গান করল, তখন কয়েকবার বেসুরো পর্দায় উঠে গেল গান। অভিভাবকেরা যখন মেয়েটির গান কেমন হয়েছে জানতে চাইলেন, তখন ওস্তাদ বললেন, ‘তোমার গলাটি ভালো মা, রেয়াজ করো, একটু বেশি করে রেয়াজ করো। দেখবে আরও সুন্দর গাইতে পারবে।’
সূত্র: ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ, জীবন ও সাধনা, পৃষ্ঠা ৫৭-৬০