হোম > ছাপা সংস্করণ

গ্রামের ভেতর ত্রাণ যাচ্ছে না, খাবার সংকট

তানিম আহমেদ, ফেনী থেকে

টানা ছয় দিন পানিবন্দী ফেনীর বেশির ভাগ মানুষ। দেখা দিয়েছে খাবার ও সুপেয় পানির সংকট। ত্রাণ নিয়ে সারা দেশ থেকে মানুষ আসছেন ফেনীতে; কিন্তু বিতরণে সমন্বয় না থাকায় খাবার পৌঁছাচ্ছে না গ্রামের ভেতর। ফলে কষ্টে আছেন তাঁরা। 

গতকাল রোববার বেলা ১টার দিকে ফেনী শহরে সদর হাসপাতাল মোড়ে হাঁটুপানিতে দাঁড়িয়ে কথা হয় কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁদের একজন মোহাম্মদ সোলাইমান পরশুরাম থেকে শহরে এসেছেন মেয়ে ও ছেলের খবর নিতে। তিনি জানান, তাঁদের বাড়ির একতলা পানির নিচে ছিল। তাঁরা ছাড়াও সাত-আটটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। প্রথম দু-এক দিন রান্না করে খেয়েছেন। পরে রান্না করতে পারেননি। 

চিড়া-মুড়ি খেয়েছেন। ত্রাণ বিতরণকারী কাউকে দেখেননি। এখন পানি কমায় নৌকা, ট্রাক এবং হেঁটে শহরে এসেছেন সন্তানদের দেখতে। 
ফুলগাজী থেকে শহরে আসা আবদুল গনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ দিতে দেখেছি। কিন্তু প্রশাসনের কাউকে চোখে পড়েনি। ছাত্ররা বিভিন্ন জেলা থেকে ত্রাণ আনলেও তা গ্রামের ভেতরের মানুষ পায় না। সবাই রাস্তার আশপাশে ত্রাণ দেন।’ 

বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রাক-পিকআপে ত্রাণ নিয়ে ফেনী আসছেন মানুষ। তাঁদের কেউ কেউ সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর কাছে ত্রাণ হস্তান্তর করছেন। তবে বেশির ভাগ নিজেরা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। গত শনিবার পর্যন্ত পানি বেশি থাকায় ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদরের অনেক জায়গায় নৌকায় করে ত্রাণ দেওয়া হয়। পানি কমায় গতকাল নৌকায় করে ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হয়নি। অনেকে পিকআপ, রিকশাভ্যানে করে দুর্গত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ দেন। নৌকা না থাকায় একাধিক ট্রাককে ত্রাণ না দিয়ে ফেরত যেতে দেখা যায়। 

শহরের সালাহউদ্দিন স্কুল মোড় থেকে হেঁটে সদর হাসপাতাল মোড় পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশ স্থান থেকে পানি নেমে গেছে। তবে ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজ এলাকায় কোমরপানি। আরও কয়েকটি স্থানে কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও কম পানি ছিল। সদর হাসপাতাল মোড় থেকে টেকনিক্যাল হয়ে ছাগলনাইয়া, পরশুরাম ও ফুলগাজী সড়কে গতকাল বেলা ১১টায়ও ছিল কোমরপানি। এ প্রতিবেদক ফুলগাজী যেতে একাধিক ট্রাক ও পিকআপের চালককে অনুরোধ করলেও তাঁরা অপারগতা জানান। 

সদর হাসপাতালের মোড়ের কাছে পাঁচ-ছয়জন মহিলা আজকের পত্রিকাকে বলেন, রাস্তার আশপাশের বাড়িতে ত্রাণ দেওয়া হলেও গ্রামের ভেতরে কেউ যাচ্ছেন না। গত কয়েক দিনে সরকারের কেউ তাঁদের খোঁজ নেননি। শনিবার ফেনীর জেলা প্রশাসন ১ হাজার ৬০০ পরিবারকে ত্রাণসহায়তা দেওয়ার কথা জানান স্থানীয় সাংবাদিকদের। 

বন্যার পানি ওঠায় চিকিৎসাসেবা তেমন মিলছে না। জেলা শহরে ৫০টির বেশি সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল থাকলেও দু-তিনটি ছাড়া বাকিগুলোতে সেবা বন্ধ। বেশির ভাগ হাসপাতালের নিচতলা পানিতে ডুবে গেছে। সদর হাসপাতালের নিচতলা গত বুধবার থেকে পানির নিচে ছিল। গতকাল পানি কিছুটা কমেছে। ওই হাসপাতালে কয়েক দিন মাত্র দু–তিনজন চিকিৎসকসেবা দিয়েছেন। তবে নার্সরা সার্বক্ষণিক ছিলেন। পানি ও বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। রান্নাঘরে পানি ওঠায় রোগী ও স্বজনদের খেতে হচ্ছে শুকনো খাবার। কেউ কেউ রোগীদেরও ত্রাণ দিয়েছেন। 

সদর হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের দোতলায় কথা হয় ফুলগাজীর বাসিন্দা স্বপ্না বেগমের সঙ্গে। গত সোমবার মধ্যরাতে স্বামীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। তিনি বললেন, প্রথম দুদিন চিকিৎসক ছিলেন। প্রতিদিন দুজন ডিউটি ডাক্তার রোগীদের দেখেন। স্বামীর অবস্থা ভালো না। বাড়িতে তিন সন্তান রেখে এসেছেন। মোবাইলে খবর নিতে পারছেন না। এলাকার কয়েকজন বলেছেন, তারা বেঁচে আছে। 

সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রোগী ও হাসপাতালের স্টাফদের জন্য আমি কিছু শুকনো খাবার ও ত্রাণ নিয়ে এসেছি। পানিবন্দী থাকায় চিকিৎসকেরা হাসপাতালে আসতে পারছেন না।’ তিনি বলেন, বন্যার কারণে চিকিৎসাব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ওষুধের মজুত শেষ হয়ে যাবে। আশপাশের দোকানেও প্রয়োজনীয় ওষুধ মিলছে না। তারপরও প্রয়োজনমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। 

সদর হাসপাতালে বর্তমানে পানিবাহিত ডায়রিয়া, জ্বর, কাশির রোগী বেশি। চিকিৎসকের অভাবে শিশুরোগী ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ভোগান্তি বেশি হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকায় অস্ত্রোপচার করা যাচ্ছে না। 

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ