কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ১২তম ব্যাচের চার ছাত্রের বিরুদ্ধে ১৩তম ব্যাচের এক ছাত্রকে চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে বেল্ট দিয়ে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলের এ ঘটনার জেরে রাতে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়।
শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ১৩তম ব্যাচের ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী রিয়াজুল ইসলাম বাঁধন ১২তম ব্যাচের সোহাগ নামের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে তুমি বলে সম্বোধন করেন। এ ঘটনায় সোহাগ ক্ষুব্ধ হন। তাঁর সহপাঠী শাফী, ওয়াকিল ও আবিরসহ কয়েকজন বাঁধনকে হলের দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে নিয়ে মারধর করেন।
মারধরের শিকার বাঁধন বলেন, ‘আমাকে নিয়ে চেয়ারের সঙ্গে গামছা দিয়ে বাঁধে। পরে বেল্ট দিয়ে আমাকে অনেক মারে। আমি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর বন্ধুরা আমাকে গাড়িতে তুলে দিলে আমি হল থেকে বাড়ি চলে আসি।’
তবে মারধরের কথা অস্বীকার করে ওয়াকিল আহমেদ বলেন, ‘সিনিয়রের নাম ধরে ডাকায় হলের বারান্দায় তাঁকে (বাঁধন) শাঁসানো হয়েছিল। তাঁকে রুমে নিয়ে মারধরের প্রশ্নই আসে না।’
এ অভিযোগের ব্যাপারে মন্তব্য জানতে আবির ও সোহাগের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এদিকে বাঁধনকে মারধরের জেরে গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে ১৩তম ব্যাচের ছাত্ররা এক জোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ১২তম ব্যাচের ছাত্র শাফীকে ২০০৪ নম্বর কক্ষের দরজা আটকে মারধর করেন বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ খবর পেয়ে তাঁর বন্ধুরা রুমের দরজা ভেঙে শাফীকে উদ্ধার করেন।
এ ব্যাপারে শাফী বলেন, ‘তাঁরা সিনিয়রদের গায়ে হাত তুলেছে। সাংগঠনিক একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। দত্ত হলের ইতিহাসে যা কোনো দিন হয়নি, তাঁরা তা করেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তাঁরা হলে থাকার যোগ্য না। আমি তাঁদের বোঝাতে গিয়েছিলাম। তাঁরা আমাকে মারধর করেছে।’
অন্যদিকে ১৩তম ব্যাচের অন্তত চারজন কর্মী বলেন, তাঁরা কাউকে মারধর করেননি। শুধু বন্ধুকে মারধরের কারণ জানতে ওই কক্ষে গিয়েছেন তাঁরা। কথা-কাটাকাটি থেকে পরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে বলে জানায় তাঁরা।
এই ঘটনায় দুই ব্যাচ মারমুখী হয়ে উঠলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এসে সংঘর্ষে লিপ্ত দুই ব্যাচের ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণ করেন।
এ বিষয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাফিউল আলম দীপ্ত বলেন, ‘আমি জেনেছি, কথা-কাটাকাটির জেরে দুই ব্যাচের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাংগঠনিকভাবে তাঁদের মিটমাট করে দিয়েছি।’
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, ‘ঘটনাটি ঘটেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ম্যাচিউরিটির অভাবে। ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেয়াদবি করবে, সেটা অপ্রত্যাশিত।’
এ বিষয়ে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মোহাম্মদ জুলহাস মিয়া বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি বিব্রত। ঘটনাটির আদ্যোপান্ত জেনে ব্যবস্থা নেব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কাছে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। আর হলের বিষয়গুলো দেখেন হল প্রাধ্যক্ষ।’