ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলার সংযোগস্থল গাজীপুরের টঙ্গী-আবদুল্লাহপুর সংযোগ সেতু। তুরাগ নদের ওপর নির্মিত সেতুর কিছু অংশ গতকাল বুধবার ভোর চারটার দিকে ভেঙে পড়ে। পরে ওই সেতুর একপাশ দিয়ে যান চলাচল শুরু হয়। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী বাজার থেকে বোর্ড বাজার পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটারেরও বেশি এলাকাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার ভোর রাতে সেতুর মাঝের কংক্রিট ভেঙে যায়। ফলে সেতুটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে গতকাল সকালে সেতুর ভাঙা অংশ স্টিলের পাত দিয়ে মেরামতের পর অপর অংশ দিয়ে শুরু হয় যান চলাচল।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৯টার পর সেতু এলাকায় যানজট কমে আসে। এরপর থেকে একটি একটি করে গাড়ি সেতু পার করা হচ্ছে। এদিকে, সেতু বেহাল হওয়ায় অনেক চালকই টঙ্গীর মুন্নুগেট থেকে উত্তরার কামারপাড়া হয়ে রাজধানীতে ঢুকছেন।
গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির উদ্দেশে গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে বাসে ওঠেন শাহরিয়ার সোহান। তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানির মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা। সকাল ১০টা পেরিয়ে গেলেও টঙ্গী-আব্দুল্লাহপুর সেতু পার হতে পারেননি তিনি।
অন্যদিকে, মুদি দোকানি নবীন হোসেন টঙ্গী বাজার থেকে পাইকারি দরে পণ্য কিনেছেন। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর ছোট নৌকায় মালামাল নিয়ে তুরাগ নদ পাড়ি দিয়ে রাজধানী উত্তরায় প্রবেশ করেন তিনি। এতে তাঁকে গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত নৌকা ভাড়া।
অনেকেই আবার গণপরিবহন থেকে নেমে হেঁটে সেতু পার হয়ে আবদুল্লাহপুরে পৌঁছান। এরপর অন্য কোনো পরিবহনে উঠে রওনা হন গন্তব্যে।
জিএমপির ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) মো. শাহদাত হোসেন বলেন, মহাসড়কের পাশাপাশি টঙ্গীর প্রায় সব শাখা রাস্তায় যানজট দেখা দেয়। তবে বেলা বাড়লে সেতুর ওপর দিয়ে ধীরগতিতে যান চলাচল শুরু হয়। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন কাজ করছে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক মহিরুল ইসলাম খান বলেন, কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সেতুর ভাঙা অংশ চলাচলের উপযোগী করা হয়। সেতুটি কয়েক যুগ আগে নির্মাণ করা হয়েছিল। এটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পাশাপাশি আরও একটি নতুন বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। তা ছাড়া এ সড়কে বিআরটি (বাস র্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্পের কাজ চলছে।
মহিরুল ইসলাম খান, ‘সেতুটি সংস্কারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। আমরা বিকল্প ব্যবস্থা করতে খুব দ্রুতই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগ ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের সঙ্গে জরুরি আলোচনা করতে যাচ্ছি। এতে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে ঢাকাগামী সকল যানবাহন তুরাগ নদের ওপর নির্মিত বেইলি সেতু ব্যবহার করে রাজধানীতে প্রবেশ করবে।’
সেতু কর্তৃপক্ষের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ছাড়া ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সব যানবাহন আব্দুল্লাহপুর দিয়ে কামারপাড়া টঙ্গী সংযোগ সড়ক ব্যবহার করে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে। আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে তুরাগ নদের ওপর নতুন সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে এ সমস্যার সমাধান হবে।’