চলতি বছর ডেঙ্গু ভাইরাসের ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে সিটি করপোরেশনকে আগেই সতর্ক করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারণে বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ডেঙ্গুতে এটাই প্রথম মৃত্যু। তা ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ২৭ জন। এ নিয়ে বর্তমানে রাজধানীসহ সারা দেশের হাসপাতালে ১১০ জন রোগী ভর্তি আছেন। এদিকে গত মে মাসের তুলনায় জুনে শতকরা রোগী বেড়েছে ১৬ গুণের বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১২ বছর বয়সী কিশোর আয়ুল খান মারা গেছে। সে সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। গত মে মাসের ৩১ দিনে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট রোগী ভর্তি হয়েছিলেন ১৬৩ জন। দিনে রোগী শনাক্তের গড় ৫ দশমিক ২৬। আর চলতি মাসের ২১ দিনে রোগী শনাক্ত ও ভর্তি হয়েছেন ৪৫৬ জন। গড়ে দৈনিক রোগী ভর্তি ২১ দশমিক ৭১। সে হিসেবে রোগী বেড়েছে ১৬ গুণ।
এদিকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে না পারায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে দুষছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সুনির্দিষ্টভাবে রোগীর নাম-ঠিকানা না দেওয়ায় মশক নিধন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করছে ডিএসসিসি।
ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শাসমুল কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোনো এলাকায় একজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হলে, রোগীর বাড়ির ৩০০ গজের মধ্যে আমরা সাঁড়াশি অভিযান চালাই। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রোগীর সঠিক তথ্য দিচ্ছে না। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়নি, এমন অনেকের নাম তালিকায় ওঠানো হয়েছে। আবার এমন অনেকের বাড়ি ঢাকার বাইরে। অথচ তাদের নামও রাজধানীর তালিকায় ওঠানো হচ্ছে।’
বিষয়টি নিয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুম থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর দৈনিক তালিকা প্রেরণ করা হয়। কিন্তু উক্ত তালিকা পর্যালোচনা করে রোগীর তালিকায় বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। রোগীর পূর্ণ ঠিকানা দেওয়া হচ্ছে না। শুধু এলাকার নাম দেওয়া হচ্ছে। অনেক রোগীর মোবাইল নম্বর সঠিক নয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) অধ্যাপক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ডিএসসিসির চিঠি পেয়েছি। সত্যি বলতে, আমরা রোগীর চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত। এই মুহূর্তে একে অপরকে দোষারোপ না করে সমন্বিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২১ জুন পর্যন্ত মোট রোগী শনাক্ত ও ভর্তি হয়েছেন ৮০৮ জন। তাঁদের মধ্যে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়েছেন ৬৯৭ জন। বর্তমানে মোট রোগী ভর্তি আছেন ১১০ জন। তাঁদের মধ্যে রাজধানীর ৪৭টি সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ১০৬ জন। বাকি চারজন ঢাকার বাইরে ভর্তি।
২০২১ সালে সারা দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১০৫ জন।