পক্ষাঘাতে শয্যাশায়ী চার সন্তানের জননী বৃদ্ধা জাহানুর বেগম (৮০) টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সম্পত্তিও বিক্রি করতে দেবেন না দুই সন্তান। এমন পরিস্থিতিতে আইনের আশ্রয় নিতে আদালতে যাওয়ার মতো শারীরিক সক্ষমতাও নেই তাঁর। বিষয়টি জানতে পেরে বিচারক তাঁর বাসায় গিয়ে জবানবন্দি শুনে অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার বরিশাল নগরীতে।
বরিশাল সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রবেশন অফিসার সাজ্জাদ পারভেজ জানান, জাহানারা বেগমের পক্ষে একটি নালিশি আবেদন বৃহস্পতিবার আদালতে পেশ করেন আইনজীবী মো. ফজলুল হক বিশ্বাস। এ সময় বরিশাল অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাসুম বিল্লাহ জানতে চান নালিশি আবেদনকারী কেন আদালতে নেই। তিনি বাড়িতে শয্যাশায়ী এবং আদালতে আসার মতো সক্ষমতা নেই-জানান আইনজীবী ফজলুল হক বিশ্বাস। এরপর বিচারক নিজেই অভিযোগকারী বৃদ্ধার বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রবেশন কর্মকর্তা বলেন, তাকে সঙ্গে নিয়ে বিচারক মো. মাসুম বিল্লাহ বেলা ১টায় বৈদ্যপাড়া সড়কে বৃদ্ধা জাহানারা বেগমের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। অভিযোগ আমলে নিয়ে জাহানুরের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ও মেয়ে সাবিনা আক্তারকে আগামী ১ নভেম্বর সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
আইনজীবী ফজলুল হক বিশ্বাস জাহানারা বেগমের অভিযোগের বরাত দিয়ে জানান, তার স্বামী সিরাজুল ইসলাম ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর মারা যান। জাহানারা বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। তাই চিকিৎসার ব্যয় বহনে খুলনার বাড়িটি বিক্রি করতে উদ্যোগী হন। গত ২২ অক্টোবর বাসায় এসে ক্রেতা দরদামও করে যান। কিন্তু তার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ও মেয়ে সাবিনা আক্তার বাধা হয়ে দাঁড়ান। তারা মায়ের চিকিৎসা খরচ ও ভরণপোষণ দিতেও অস্বীকার করেন। তার আরও কয়েকজন ছেলেমেয়ে আছে। এর মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান ও মেয়ে সাবিনা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। জাহানারা বেগম বর্তমানে বৈদ্যপাড়া সড়কে ছোট মেয়ে সাহিদা আক্তারের বাসায় অবস্থান করছেন।
অ্যাড. ফজলুল হক আরও জানান, বিচারক বৃদ্ধার অভিযোগের ভিত্তিতে পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন ২০১৩-এর ৫ ধারা অনুযায়ী সন্তান মোস্তাফিজ ও সাবিনার বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ করে সমন জারি করেছেন। ভরণপোষণ আইনে বরিশাল ফৌজদারি আদালতে এটাই প্রথম মামলা জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, মোস্তাফিজুর রহমান খুলনায় পিতার বাড়িতে এবং সাবিনা আক্তার বরিশাল নগরীতে স্বামীর বাড়িতে থাকেন।