দেশের ঋণখেলাপির তালিকায় শীর্ষে ধনীরা। ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে তা ফেরত দিতে চান না তাঁরা। কেউ কেউ কৌশলে পুনঃ তফসিলের আড়ালে ঋণ নিয়মিত দেখান। আদালতের দিকেও থাকে বাড়তি ঝোঁক। তবে ছোট ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে বিপরীত দৃশ্য লক্ষণীয়। তাঁরা ঋণ নিয়ে সময়মতো পরিশোধে মরিয়া থাকেন। তাঁরা ঋণের দায়কে গলার কাঁটা মনে করেন। আর আদালতকে ভয় পান বাঘের মতো। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের তিন হাজার কোটি টাকার বিশেষ পুনঃ অর্থায়ন তহবিল (রিভলভিং) বিশ্লেষণে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের করোনার ধাক্কা সামলাতে ২০২০ সালে তিন হাজার কোটি টাকার বিশেষ পুনঃঅর্থায়ন তহবিল (রিভলভিং) গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী তথা শ্রমিক, প্রান্তিক কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও জেলেদের মধ্যে এ তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ করা হয়। সেই ঋণের কোনো খেলাপি নেই। ঋণ আদায়ের হার প্রায় শতভাগ। আবার রিভলভিং খাতের গঠিত তহবিলের সুদসহ মোট অর্থের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০ কোটি টাকা বিতরণের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর উদ্যোক্তারা পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘আমাদের এই তহবিলের সঙ্গে প্রায় ৫০ ব্যাংক জড়িত। ঋণ বিতরণ ও আদায়ের পরিমাণ অন্যান্য তহবিলের থেকে ভিন্ন। ঋণগ্রহীতারা পরিশোধে মরিয়া। যেখানে বড় গ্রহীতাদের ঋণ আদায়ে সাড়া মেলে না। তাঁরা ঋণ পরিশোধে অনীহা প্রকাশ করেন।’
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, পুনঃ অর্থায়ন তহবিলের অর্থ এখন পর্যন্ত ৭ লাখ ২০ হাজার উদ্যোক্তা ও সুবিধাভোগীর মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৬ লাখ ৩০ হাজার বা ৮৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। এই তহবিলের সরাসরি সুদের হার ৭ শতাংশ। তবে ৫০টির মতো ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই ঋণ বিতরণে চুক্তি হয়েছে।
ঋণগ্রহীতা মিনারা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘করোনার পরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৭৫ হাজার টাকা ঋণ নিই। সহজ শর্তের কারণে ঋণ পেতে কোনো ঝামেলা পাইনি। ঋণ পরিশোধ না করলে রাতে ঘুম হয় না। এ জন্য সময়মতো ঋণ পরিশোধ করেছি। আর আদলতকে তো বাঘের মতো ডরাই।’