ছোটবেলায় হাসির কমিকস, গল্প পড়তে কিংবা ছবি দেখতে মনটা ব্যাকুল থাকত। বয়সের একটা সময় এসে হুমায়ূন আহমেদ, মমতাজ উদদীন ও আমজাদ হোসেনের লেখা নাটক দেখার জন্য অধীর অপেক্ষায় থাকতাম; বিশেষ করে সেই নাটকগুলো যদি ঈদের বিশেষ আয়োজন হিসেবে দর্শকদের সামনে আসত। মন খুলে হাসতে পারার একটা কৌশল থাকত নাটকে ও নাট্যকারদের লেখায়। অদ্ভুত সব বিষয় অথচ বড় বাস্তব এমন সব ঘটনাকে তাঁরা এমনভাবে লেখনীর মাধ্যমে, নাটকের মাধ্যমে উপস্থাপন করতেন যে দারুণ ভালো লাগা নিয়ে না হেসে পারা যেত না। প্রাণ খুলে হাসতে পারার অদ্ভুত সব নাটক আর তার সংলাপ। সেই সঙ্গে চির সত্য বিষয়গুলো যা সচরাচর মানুষ মনে করে না, ভুলেও বলে না, সেই সব চোখের সামনে ভেসে উঠত। বিনোদনের সীমায় কীভাবে দর্শক-শ্রোতা বিলীন হতো, নাটকগুলো ছিল তার এক একটি জলজ্যান্ত প্রমাণ।
টিভি নাটকের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের জন্য তৈরি হয়েছিল কিছু কমেডিয়ান ক্যারেক্টার। টেলি সামাদ, আনিস, হাসমত ছিলেন তেমনই বাংলাদেশের প্রখ্যাত কৌতুক অভিনেতা। পর্দার পাশাপাশি লোকমুখে সেই নাম উচ্চারিত হওয়ামাত্রই ভক্তরা হেসে উঠতেন। আর বিদেশি ছবির মধ্যে আছে থ্রি স্টুজেস, মিস্টার বিন কিংবা চার্লি চ্যাপলিন। বাচ্চাদের পাশাপাশি বড়দের হাসির খোরাক জোগায় এমন সব ছবি। যা হোক, মানবজীবনকে বেঁচে থাকার জন্য নানান সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। জীবন-জীবিকার কঠিন সময় ও সংঘাত পেরিয়ে মানুষ তার গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করে, পৌঁছায়। জীবনের সফলতার স্বাদ পেয়ে যায় কেউ কেউ। কেউবা ব্যর্থতার ভারে ম্লান হয়, বিপন্ন হয়। সুখ আর দুঃখের এমন অবস্থায় বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজন রয়েছে হাসির, যা কান্নার ভার কমায়, হালকা করে। মানসিক শান্তির বন্ধ জানালা খুলে দেয়। প্রমাণিত সত্য, হাসি ভালো থাকার এক অন্যতম চর্চা। হৃদ্যন্ত্র, শ্বাসতন্ত্র ভালো থাকে। হাসতে পারার মধ্য দিয়ে ভেতরের জমে থাকা দুঃখ-কষ্ট বেরিয়ে আসে। নিখাদ হাসি, নির্মল হাসি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির ওষুধের চেয়েও মূল্যবান ও রাসায়নিক বিষমুক্ত।
এখনকার সত্য অবশ্য অন্য খানে, অন্যভাবে। আর সেটা হলো, মানুষ এখন ওই সব নাটক বা চলচ্চিত্র দেখে হাসে না। মূলত ওই সব দেখে হাসার সৌভাগ্য এখন আর হয় না। মানুষের হাসি তাই এখন নিখাদ বা নির্মলও হয় না। মানুষ এখন হাসে অন্য কারণে, যে কারণটা শিশু থেকে শুরু করে বয়স্করা জানেন এবং সবাই এক তাল-লয়ে হাসেন। কতটা অযৌক্তিক বা ভুল বলা হবে যে সবাই এখন এক কাতারে হাসেন কতিপয় মন্ত্রী-মিনিস্টারের কথায় এবং তাঁদের আচরণে। কী বলতে কী বলে ফেলেন, কী বললে কী মানে দাঁড়িয়ে যায়, সেই সব না হিসাব কষে তাঁরা যা বলেন, তাতেই জাতি-মনে হাসির উদ্রেক জাগে। যদিও এই হাসি অত্যন্ত কষ্টের, হতাশার। এমন ঘটনা কিন্তু কম নয়।
একজন রসিক মানুষ বলছিলেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় মন্ত্রীদের জন্য একটি শুভ মন্ত্রণালয়। এখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের শুভ পরিণয়ের সম্ভাবনা থাকে। যা-ই হোক, ঘটনা নিয়ে সরকারের ভেতর অনেকেই বিব্রত হয়েছেন। তথ্যমন্ত্রী বলেছেন, কথিত আত্মীয়দের রেলমন্ত্রীর না চেনার তথ্য সঠিক। তিনি আরও বলেন, রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর কথায় টিটিইকে সাময়িক বরখাস্ত করা সমীচীন নয়। বিনা টিকিটে ট্রেনে চড়ে বসে মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেওয়ার ঘটনা নতুন বা এই প্রথম নয়; বরং এমন পরিচয় দিয়ে মন্ত্রী, আমলা, রাজনীতিকদের অনেক আত্মীয়স্বজন অনেক ধরনের সুবিধা ভোগে এগিয়ে আছেন, এগিয়ে থাকছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় যে মন্ত্রীর চেয়ে তাঁর আত্মীয়স্বজনই বেশি ক্ষমতাধর, তাঁরাই মন্ত্রণালয় চালান।
পরিশেষে বলব, অহেতুক হাসির খোরাক না পাক জনগণ। মন্ত্রীরা সেই বিষয়ে অধিক সতর্ক হবেন আশা করি। তাঁদের সহধর্মিণীরা মন্ত্রণালয় পর্যন্ত না পৌঁছান, অফিশিয়াল সিদ্ধান্ত দেওয়ার অতি-আধুনিকতা না দেখান। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা যাতে তাঁদের দায়িত্ব সুষ্ঠু ও ন্যায়সংগতভাবে এবং নির্ভয়ে পালন করতে পারেন, সে বিষয়টি যেন প্রতিটি মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করে।