১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের অপারেশন সার্চলাইটের ভয়াবহতা তখনো উপলব্ধি করে উঠতে পারেনি বাঙালি। ২৭ মার্চ বুড়িগঙ্গা নদীর ওপারে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকেই। তাঁদের মধ্যে আছেন কবি নির্মলেন্দু গুণও। নেকরোজবাগ নামের সে জায়গাটিতে আরও যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে একজনকে চিনতে পারলেন কবি। তাঁর নাম খসরু। বর্ষীয়ান অনেক মানুষই মনে করতে পারবেন, খসরু-মন্টু নাম দুটি একদা একই সঙ্গে উচ্চারিত হতো। মূলত আইয়ুব খানের তৈরি এনএসএফ নামের ছাত্রসংগঠনের দুর্বৃত্তপনার বিরুদ্ধে বীরের মতো লড়াই করার জন্যই তাঁরা দুজন সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পান। মুক্তিযুদ্ধের পর খসরু কয়েকটি সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন।
সেই খসরুকে নেকরোজবাগে দেখে পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল নির্মলেন্দু গুণের। ইকবাল হলের সামনের সিঁড়িতে বসে কয়েক বন্ধু আড্ডা মারছিলেন। গুণের তখন খোঁচা খোঁচা দাড়ি। দলবল নিয়ে খসরু হলে ঢুকেছিলেন। তারপর বলা নেই কওয়া নেই, অন্য সবাইকে ছেড়ে ছুটে এলেন গুণের দিকে। তারপর পাঞ্জাবির কলার গলার সঙ্গে সজোরে চেপে ধরে গালাগাল করতে লাগলেন। পাড়ার মাস্তানেরা যেমন অসহায় কাউকে ধরে তার সঙ্গে পোকামাকড়ের মতো আচরণ করতে থাকে, নির্মলেন্দু গুণের সঙ্গে ঠিক সে রকম আচরণই করতে থাকলেন।
‘তুই কে? তোর আসল কাজ কী?’ রক্তচোখে জিজ্ঞেস করলেন খসরু। নির্মলেন্দু গুণ বললেন, ‘এ কি করছেন? ছাড়ুন!’
খসরুর হাতের চাপে দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড়! খসরু বলেন, ‘চল, মাঠে চল!’
খসরুর মনে হয়েছিল, দীর্ঘাঙ্গী নির্মলেন্দু গুণ বুঝি সিআইডির তথ্য পাচারকারী। কেন তাঁর সেটা মনে হয়েছিল, তার কোনো উত্তর কারও জানা নেই।
এ সময় দূর থেকে দৌড়ে আসেন ইকবাল হলের প্রাক্তন ভিপি মাসুদ পারভেজ আর সে সময়ের ভিপি জিনাত আলী। তাঁরা খসরুর হাত থেকে নির্মলেন্দু গুণকে উদ্ধার করেন। তাঁরা বোঝান, নির্মলেন্দু গুণ কোনো গুপ্তচর নন, সিআইডির তথ্য পাচারকারী নন, তিনি হলেন কবি, ভালো কবি।
সূত্র: নির্মলেন্দু গুণ, আত্মকথা ১৯৭১, পৃষ্ঠা ১১৫-১১৬