করোনা মহামারিতে দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হলেও লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের অনেক শিক্ষার্থী আর ক্লাসে ফেরেনি। বিভিন্ন কারণে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। ছেলেদের অনেকে নানা ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়েছে, মেয়েদের একটি অংশ বাল্যবিবাহের শিকার হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার নিম্ন আয়ের দরিদ্র অভিভাবকেরা তাদের ছেলেকে নদীতে মাছ ধরা, দিনমজুর, ইটভাটা ও দোকানে কর্মচারী, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন কাজে দিয়েছেন। কেউ কেউ সন্তানকে টাকা উপার্জনের জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
এমরান হোসেন নামের এক ছাত্র বলে, ‘আমি আর ইস্কুলে যাই না। এখন রাজমেস্তুরির কাজ করি।’
কমলনগর ও রামগতি উপজেলার উপকূলীয় এলাকার জেলে ও কৃষক পরিবারের সন্তানেরা বেশি ঝরে পড়ছে। আবুল কালাম নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘করোনা মহামারির দীর্ঘ বন্ধে কোনো অপরাধে জড়ায় কি না সেই ভয়ে আমার ছেলেকে সিএনজি মেকানিকের দোকানে কাজে দিছি।’
কমলনগরের হাজির হাট গ্রামের নুর নবির ছেলে এবার এসএসসি পাশ করেছে। করোনার কারণে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তাকে বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
হাজিরহাট বাজারের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেনের ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র আকিল (ছদ্মনাম) এখন নিয়ম করে প্রতিদিন দোকানে বসে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বই-খাতার সঙ্গে তার এখন আর সম্পর্ক নেই। বাবার সঙ্গে ব্যবসায়ী হয়ে উঠছে আকিল।
রামগতিতে ভাঙ্গারির দোকানে কাজ করে রনি। সে জানায়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে এমন দুজন ছাত্র তার সঙ্গে সহযোগী হয়ে ভাঙ্গারির দোকানে কাজ করছে। দীর্ঘদিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় পড়ালেখায় তাদের তেমন আগ্রহ নেই। তাদের এখন পুরোপুরি কাজে মনোযোগ।
পাটোয়ারিরহাট মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা মুহাম্মদ আবুল খায়ের জানান, করোনা মহামারির দীর্ঘ ১৭ মাসে তাঁর মাদ্রাসার শতাধিক ছাত্রীর গোপনে বাল্যবিবাহ হয়ে গেছে।
রামগতি আহমদিয়া কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) শাজাহান তালাসী জানান, করোনার কারণে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় কিছু শিক্ষার্থী ছোটখাটো চাকরি ও ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে।
কমলনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ২০ থেকে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। করোনা মহামারিতে দীর্ঘ দিন বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় মেয়েদের কিছু অংশ বাল্যবিবাহ আর ছেলেদের কিছু অংশ বিভিন্ন চাকরি করছে।