ময়মনসিংহ মহানগরীর প্রধান সড়কসহ অলিগলি ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। এসবের প্রায় সবই টাঙিয়েছেন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। এ ছাড়া উৎসব, সাফল্য ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন হিসেবে এগুলো টাঙাচ্ছে। অবৈধ এসব ব্যানার-পোস্টার একবার টাঙানোর পর আর অপসারণ করছেন না তাঁরা।
অবৈধ ব্যানার-ফেস্টুন মোড়ের চারদিকে টাঙানোয় অপর পাড়ের সড়ক দেখা যাচ্ছে না। এতে মোড় ঘোরার সময় শঙ্কায় থাকেন চালকেরা। অপরদিকে নগরীর সৌন্দর্যও নষ্ট হয়েছে।
গত বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর টাউন হল মোড়, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম চত্বর, জিলা স্কুল মোড়, নতুন বাজার পায়রা চত্বর, গাঙ্গিনাপাড় মোড়, চরপাড়া মোড়, বাইপাস, জিরো পয়েন্ট পাটগুদাম ব্রিজ মোড়, ত্রিশাল বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে সড়ক বিভাজকের বেড়ার খুঁটিতে ও বাঁশ দিয়ে ব্যানার-পোস্টার লাগানো হয়েছে।
ভাস্কর্য, সৌন্দর্যবর্ধক স্থাপনা, সড়ক বিভাজক, ভবনের দেয়াল ও গুরুত্বপূর্ণ মোড় এসব ব্যানার দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে। এর আগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে অলিগলি ঠাসা থাকলেও বর্তমানে তা দখল করে নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো।
জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসের মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্ধিত সভা হয়। এতে কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীদের আগমন উপলক্ষে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা শুভেচ্ছা পোস্টার লাগান। এর মধ্যে মেয়রের অনুসারীদের পোস্টার চোখে পড়ার মতো।
এদিকে ব্যানার-ফেস্টুনে নির্ধারিত সভা, সমাবেশ, উৎসব, শুভেচ্ছা ও অনুষ্ঠানের তারিখ শেষ হলেও তা অপসারণ করছেন না সংশ্লিষ্টরা। বছরের পর বছর এসব থেকে যাচ্ছে।
নগরীর ঘুন্টি এলাকার রিকশাচালক হযরত আলী বলেন, এক মাস ধরে টাউন হল মোড়ে রিকশা নিয়ে এলেই এলোমেলো লাগে তাঁর কাছে। আগে দূর থেকে ওপার থেকে কোনো যান আসছে কি না তা দেখা যেত।কিন্তু বর্তমানে পোস্টারের কারণে কিছু দেখা যায় না।
স্থানীয় অটোরিকশাচালক মো. শাহজাহান বলেন, অটোরিকশা চালানোর সময় রঙিন বাহারি পোস্টার চোখে পড়ে। সড়কের এপাশ-ওপাশ ভালোভাবে দেখা যায় না জানিয়ে তিনি বলেন, তাঁর অটোরিকশা কিছুদিন আগে আরেকটি রিকশার সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছিল।
জেলা জন উদ্যোগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে নেতা-কর্মীরা পোস্টার টানাবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এসবের একটা নীতিমালা রয়েছে। সেটা সবাইকে মানা উচিত। কেউ যদি পোস্টার টাঙিয়ে সেগুলো না খোলে তাহলে সিটি করপোরেশন উচ্ছেদ অভিযান করবে। কিন্তু বছরের পর বছর পোস্টার টাঙিয়ে রাখা কোনোভাবেই সমুচিত নয়।’
মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক নওশেল আহম্মেদ অনি বলেন, ‘মেয়রের নির্দেশে শহরজুড়ে আমি ও আমার সংগঠনের কয়েকজন নেতা শতাধিক ব্যানার ও ফেস্টুন টাঙিয়েছিলাম। এখন অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে। ধাপে ধাপে এগুলো সরানোর চেষ্টা করছি।’
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু বলেন, ‘ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন লাগাতে সব সময় আমার সমর্থনকারীদের নিরুৎসাহিত করি। তবে অন্য কাউকে তো এ বিষয়ে কিছু বলা যায় না।’ কারণ হিসেবে কেউ আবার রাগ করে কি না সেদিকে ইঙ্গিত করেন তিনি।
মেয়র আরও বলেন, ‘শহরজুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পোস্টারে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। এটা আমারও ভালো লাগে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে যেন এমনটি না হয়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’ বর্তমানে টাঙানো ব্যানার-ফেস্টুন উচ্ছেদে অভিযান শুরু করা হবে বলেও জানান মেয়র।