১৯৩৭-৩৮ সালের দিকের কথা। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে মন-কষাকষি হয়েছে শৈলজারঞ্জন মজুমদারের। রবীন্দ্রনাথের কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। কদিন অপেক্ষার পর রবীন্দ্রনাথ ডেকে পাঠিয়েছেন শৈলজারঞ্জনকে। না গিয়ে উপায় নেই।
ঘরে চেয়ারে বসে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বাঁ দিকের দরজা দিয়ে ঢুকলেন শৈলজা। ডান দিকে তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘আসছ না যে তুমি?’
শৈলজা বললেন, ‘কাজের চাপে আসতে পারিনি।’
রবীন্দ্রনাথ একবার ‘হুঁ’ করলেন। তারপর বললেন, ‘হুঁ, কাজ ছিল। যে লোকটা দিনে দুবার-তিনবার করে আনাগোনা করে, ঘুরঘুর করে, না এসে পারে না, সে দু-তিন দিন ধরে কাজের চাপে আসছে না, একবারও এল না—এটা বিশ্বাস করতে হবে? যদি আমি তোমার মনে আঘাত দিয়ে থাকি সে তো আমায় বুঝতে হবে। আমি তো জানিনে কিছু।’
শৈলজা কবিকে প্রণাম করে চলে এলেন।
শান্তিনিকেতনে তখন অসহ্য গরম। সেদিনই কবি কলকাতা হয়ে কালিম্পং যাবেন। শৈলজার খুব ইচ্ছে হলো স্টেশনে যাওয়ার আগে কবিকে প্রণাম করার। কিন্তু দারোয়ান বলল, তিনি স্টেশনের উদ্দেশে বেরিয়ে গেছেন। মন খারাপ হয়ে গেল শৈলজার। বন্ধু সত্যবাবুর কাছে গেলেন কথা বলতে। সে সময় দেখলেন, রবীন্দ্রনাথের গাড়িটি ফিরে আসছে ধীরে ধীরে। রবীন্দ্রনাথ গাড়িতে থাকলে গাড়ি চলত ধীরে ধীরে। তার মানে কি কবি কলকাতায় যাননি!
পরদিন ভোরে বৈতালিকে দাঁড়ানোর পর অনিল চন্দ বললেন, ‘জানেন গুরুদেবের কাণ্ড! আকাশে মেঘের ঘটা দেখে তিনি বিকেলে স্টেশন থেকে ফিরে এসেছেন!’
রবীন্দ্রনাথের কাছে গিয়ে শৈলজা বললেন, ‘আমার কী ভাগ্য! কাল গিয়ে আপনাকে পাইনি, না পেয়ে মনটা খারাপ ছিল। সত্যবাবুর বাড়িতে বারান্দায় বসে বলছিলাম, গুরুদেব যদি ফিরে আসেন তো বেশ হয়। সেই দেখি বাস্তব হলো।’
রবীন্দ্রনাথ হাসতে হাসতে বললেন, ‘কালিম্পংয়ের শৈলর চেয়ে শান্তিনিকেতনের শৈলর টান বেশি?’
সূত্র: শৈলজারঞ্জন মজুমদার, যাত্রাপথের আনন্দগান, পৃষ্ঠা ৫৮-৫৯