নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলা লেকের পাড় এখনো দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। সরানো হয়নি লেক দখল করে তৈরি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নিজস্ব কার্যালয়। তিনি লেক এলাকার অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের দাবি করলেও সরেজমিনে উল্টো অবস্থা দেখা গেছে।
অপরদিকে লেকের দখলদার হকারদের বিকল্প জায়গা দেওয়া হলে সরিয়ে নেবেন বলে জানিয়েছেন ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। তবে চাঁদাবাজির বিষয়টি জানেন না দাবি করেন তাঁরা।
এর আগে গত ৩ নভেম্বর ‘সৌন্দর্যবর্ধনে আগেই লেকের সৌন্দর্যহানি’ শিরোনামে আজকের পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়ে ছিল। এরপরও কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালায়নি নাসিক ও প্রশাসনের। অন্যদিকে পুলিশ একসময় লাগাতার উচ্ছেদ অভিযান করলেও এখন সিটি করপোরেশনের দোহাই দিয়ে, তা বন্ধ রেখেছে।
সিদ্ধিরগঞ্জে ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খালের নাসিকের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গলাকাটা সেতু থেকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ভাঙ্গারপুল পর্যন্ত সাড়ে ৫ কিলোমিটার অংশের সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিবেশ রক্ষায় লেক তৈরি করছে সিটি করপোরেশন। করোনার কারণে পিছিয়ে পড়ার কারণে লেকের কাজটি এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি। লেকটি দখলমুক্ত রাখতে পারলে পাল্টে যাবে সিদ্ধিরগঞ্জের চিত্র।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, লেকের বেশিরভাগ জায়গা এখনো দখল করেছে কয়েকটি অসাধু চক্র ও প্রভাবশালীরা। এসব স্থানে খাবারের হোটেল, ভাসমান কাঁচাবাজার, ফলের দোকান, বেকারি, ব্যানার-ফ্যাস্টুন করার দোকান, সেলুন, কসাইখানা, রিকশার গ্যারেজসহ অন্যান্য স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। এসব দোকান থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে প্রভাবশালীরা। এ ছাড়া সন্ধ্যায় বসানো হয় আরও হরেক রকমের দোকান। এতে চলাচলের রাস্তা ছোট হয়ে গেলে তখন জ্যাম লেগে যায় এ সড়কটিতে। এ ছাড়া সাত নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নিজস্ব কার্যালয় তৈরি করা হয়েছে লেকের জায়গা দখল করে।
১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘এরা গরিব মানুষ। এদের আমরা বিকল্প জায়গা না দিলে এরা কী করে খাবে? আমরা মেয়রকে মৌখিক জানিয়েছি, তিনি এসব হকারের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করলেই তাঁদের সেখানে পাঠিয়ে দেব। তবে এখানে কে বা কারা চাঁদাবাজি করে, তা আমার জানা নেই।’
৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, ‘কিছুদিন আগে গ্যাসলাইন ও ইপিজেডের সামনের হকারদের আমি সরিয়ে দিয়েছি। আমি চলে গেলে যদি তারা আবার বসে, তাহলে আমি আবার তাঁদের উচ্ছেদ কর দেব।’ নিজের কার্যালয় স্থাপন সম্পর্ক তিনি বলেন, ‘লেকের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমার কার্যালয়সহ কিছুই সরানো হয়নি। লেকের কাজ শেষ হলে এগুলো সরিয়ে ফেলব।’
ময়লার গাড়ি রাখার বিষয়টি তিনি বলেন, ‘আমরা ময়লার বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশন বরাবর চিঠি দিয়েছি, তাঁরা এখনো কিছু বলেনি। আমাদের এখানে জায়গা নেই, তাই ময়লার গাড়িগুলো রাখা হয়। আমরা ময়লার গাড়ির ওপর পলিথিন দিয়ে আটকিয়ে দিই, যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায়।’
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মশিউর রহমান বলেন, ‘আগেও আমরা এসব জায়গায় কয়েক শ অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করেছি। যেহেতু এটি সিটি করপোরেশনের জায়গা, তাই তারাই দেখবে। তবে উচ্ছেদ অভিযানে পুলিশের সহযোগিতা লাগলে, আমরা অবশ্যই করব। তবে চাঁদাবাজির বিষয়টি আমার জানা নেই।’