ঋতুচক্রে এখন মধ্যহেমন্ত। কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছিল আষাঢ়ের আবহে। অসময়ের এই বৃষ্টির সঙ্গে যোগ হয় যানজটের বিড়ম্বনা। এর মধ্যেই রাস্তায় বারবার হাতঘড়ি দেখছিলেন এক বাইকচালক। তাঁর পেছনে স্কুলের ইউনিফর্মে আরেকজন বসা। দুজনের চোখেমুখেই দুশ্চিন্তার ছাপ। রোববার সায়েন্স ল্যাব মোড়ের সেই সিগন্যাল ছাড়ে ৯টা ২০ মিনিটে। তড়িঘড়ি করে বাইক চালিয়ে অবশেষে তাঁরা আজিমপুর গার্লস স্কুলে পৌঁছান। আগেই বোঝা যাচ্ছিল, পেছনে বসা ছেলেটি এসএসসি পরীক্ষার্থী। তার ভোগান্তির পুরো গল্পটা জানতেই আসলে এভাবে পিছু নেওয়া।
বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে পৌঁছাতে হয়। তাই বাইক থেকে নেমেই দৌড় দিল ওই পরীক্ষার্থী। এদিকে কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বাইকচালকের পরিচয় পাওয়া গেল। কথা হয় গভ. ল্যাবরেটরি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের ওই পরীক্ষার্থীর বাবা মো. নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘১০টার পরীক্ষা ধরতে বসিলার বাসা থেকে ছেলেসহ সকাল ৮টায় বের হই। জ্যামের কথা ভেবে বাইক নিয়েই আসি। রাস্তায় বৃষ্টিতে ভিজেছি। সত্যি বলতে, জ্যামে থাকার ওই সময়টায় আমি আর আমার ছেলে যে দুশ্চিন্তা করেছি, এটা একজন পরীক্ষার্থীর জন্য অমানবিক। না-জানি আমার ছেলের পরীক্ষাটাই খারাপ হয়।’
শুধু সায়েন্স ল্যাবই নয়, রোববার রাজধানীর গাবতলী, মিরপুর, শ্যামলী, আসাদগেট, শাহবাগ ও নিউমার্কেট এলাকায় যানজট প্রকট আকার ধারণ করে। সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত যানজটের তীব্রতায় বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় এসএসসি পরীক্ষার্থীদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাফিক পুলিশের দারুসসালাম জোনের কমিশনার ইত্তেখায়রুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) মধ্যরাত থেকে একটি বড় মিকশ্চার গাড়ি টেকনিক্যাল মোড়ে উল্টে পড়ে ছিল। গাড়িটা এমন জায়গায় পড়েছে, যেটার কারণে অন্য গাড়ি চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। সকাল থেকে চেষ্টা করেও গাড়িটি ঠিকভাবে সরানো যাচ্ছিল না। পরে দুপুরের দিকে বড় রেকার এনে রাস্তা স্বাভাবিক করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিরপুর এলাকায় অনেক স্কুলেই এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র আছে। পরীক্ষার্থীদের বহনকারী গাড়িগুলোও যানজটে পড়ে। আমরা বিশেষ ব্যবস্থায় কিছু কিছু শিক্ষার্থীকে সহযোগিতাও করেছি। তবে সব জায়গায় পারিনি।’
এদিকে পরীক্ষার দিন অনেক অভিভাবকই ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হন। যে কারণে বৃষ্টির মধ্যে অন্য যাত্রীদের ভোগান্তি বেড়েছে।