নান্দাইলে দ্রুত বাড়ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। অথচ সংক্রমণ রোধে সরকারি বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলা হলেও মানছে না কেউ। সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে যাওয়া নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু দোকান, শপিংমল, বাজার এবং হোটেল রেস্তোরাঁসহ জনসমাগমের স্থলে মাস্ক পরছেন না কেউ। এ ছাড়া হোটেলসহ অনেক স্থানে করোনা টিকার সনদ প্রদর্শন করার কথা বলা হলেও তাও মানা হচ্ছে না।
উপজেলার পৌর এলাকাসহ কয়েকটি স্থান ঘুরে দেখা যায়, বাজারের অধিকাংশ হোটেলেই পরা হচ্ছে না মাস্ক। প্রবেশপথে নেই স্যানিটাইজারও। পথচারী ও যাত্রীদের অধিকাংশের মুখেও নেই মাস্ক। টিকা সনদ দেখানো ক্ষেত্রে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির উদ্যোগ না নেওয়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
এদিনে নান্দাইলের বিভিন্ন ব্যাংকে দেখা গেছে, কারও মুখে মাস্ক নেই। ঘেঁষাঘেঁষি করে দাঁড়িয়ে আছেন সবাই। অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে টিকিটের জন্য লম্বা লাইন থাকলেই মানা হয়নি সামাজিক দূরত্ব। হাটবাজারেও মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। কয়েকজনের কাছে মাস্ক থাকলেও অধিকাংশের পকেটে কিংবা দাঁড়িতে ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়।
কানুরামপুর বাজারে ফয়েজ উদ্দিন বলেন, ‘করোনা-টরোনা তো কিছু দেহি না। কিছুদিন পর পর দেশে কি শুরু করে তা বুঝি না। মাঝে মাঝে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ এসে দৌড়ানি দেয় মাস্কের জন্য। এই জন্য পকেটে একটা রাহি।’
মোয়াজ্জেমপুর ইউনিয়ন পরিষদ বাজারের সেলুন ব্যবসায়ী শ্রী চন্দন বলেন, ‘আমরা মানুষের সংস্পর্শে থেকে চুল, দাঁড়ি কেটে দিই। কার শরীরে করোনা সংক্রমণ তা বলা মুশকিল। কি করব পেটে দায়ে তো কাজ করে খেতে হবে। তবুও স্বাস্থ্যবিধি মেনে যতটুকু পারা যায় চেষ্টা করি।’
নান্দাইল বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী রিপন মিয়া বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের বিধিনিষেধ আমাদের বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে। ঠিকমতো ব্যবসা করা যায় না। মানুষজন আসলেও অনেকের মুখে মাস্ক থাকে না। মাস্কের কথা বললে নানা রকম অজুহাত দেখিয়ে অন্য দোকানে চলে যায়। এতে করে ক্রেতা কমে যাওয়ার আশঙ্কায় তেমন কিছু বলাও যায় না।’
এদিকে জনসমাগম সীমিত করার নির্দেশনা থাকলেও নান্দাইলে গত ৯ দিনে কোনো প্রভাব পড়েনি। অবাধে চলাফেরা ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে বেড়েছে সংক্রমণ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে প্রথম থেকেই তৎপর চিকিৎসক ও নার্সরা। উপজেলায় দুই লাখ ১৩ হাজার ৫৫৯ জনকে প্রথম ডোজ, ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৭২ জনকে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় এক হাজার বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ২৯ হাজার ২০৮ জন শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনা হয়েছে। গত কয়েক দিনে করোনা পজিটিভ হয়েছেন ২৮ জন।
নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মাহমুদুর রশিদ বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এ অবস্থায় সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। যারা করোনার টিকা নেয়নি, তারা যেন দ্রুত অনলাইনে নিবন্ধন করে টিকা গ্রহণ করে। আমরা উপজেলার ৫০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি।’
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সরকারি বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। বিধিনিষেধ অমান্য করায় কয়েক দিনে ১১ মামলায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।’