হোম > ছাপা সংস্করণ

মৎস্যঘাটে নেই কোলাহল

রুদ্র রুহান, বরগুনা

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার বিএফডিসি মৎস্যঘাটে কাকডাকা ভোর থেকে শুরু হয় কর্মব্যস্ততা। জেলে, পাইকার, আড়তদারসহ মৎস্যজীবীদের পদচারণায় মুখর থাকে গোটা বিএফডিসি এলাকা। একের পর এক ট্রলার নোঙর করে বিএফডিসি ঘাটে।

ঘাট শ্রমিকেরা ঝাঁপি নিয়ে ছুটে আসেন, ট্রলার থেকে মাছ তুলে নিলামের জন্য স্তূপ করা হয়। এরপর শুরু হয় নিলামের ডাক। এই ৩ হাজার ৪০০, ৩ হাজার ৫০০, ৪ হাজার, ৪ হাজার ১০০, বিক্রি শেষ। ক্রেতা মাছ বুঝে নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে গাড়িতে তুলে চালান করে দেন। এখানকার গত চার মাসের চিত্র এটি। কিন্তু এখন গোটা এলাকা জুড়ে সুনসান নীরবতা।

গত ৪ অক্টোবর থেকে ইলিশের প্রজননকালীন নিষেধাজ্ঞা শুরু হলো। ২২ দিনের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। নিষেধাজ্ঞাকে সামনে রেখে আড়তদার-মৎস্যজীবীসহ সব শ্রেণির মানুষের প্রস্তুতি থাকে। ৩ অক্টোবর থেকেই তারা পাততাড়ি গুটিয়ে বাড়ির পথ ধরেন।

বঙ্গোপসাগরের উপকূলে উপজেলা পাথরঘাটা, মৎস্য আহরণের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। এখান থেকে জেলেরা বিভিন্ন হাটে মাছ বিক্রি করতে নিয়ে যেতেন। পরে এখানেই গড়ে ওঠে মৎস্যকেন্দ্র। এখন আর মাছ বিক্রির জন্য জেলেদের অন্য কোথাও যেতে হয় না। বরং মৎস্য ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন। বিনিয়োগ করা হয় কোটি কোটি টাকা। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিপুল পরিমাণ ইলিশ যায়।

পাথরঘাটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মোহনা, পশ্চিমে বলেশ্বর নদের ওপারে সুন্দরবন। আর উত্তরে দেশের অন্যতম ইলিশের ভান্ডার বিষখালী নদী। বছরান্তে ইলিশ ধরার মৌসুম এলে হেসে ওঠে এই জনপদের মানুষ। সাড়া পড়ে যায় চারদিকে। মৌসুমের জন্য জেলেরা নতুন জাল কেনেন, ট্রলার মেরামত করেন, ট্রলারে লাগিয়ে নেন সৌর বাতি।

পাথরঘাটা পৌর শহর থেকে শুরু করে আশপাশের গোটা এলাকার এক–তৃতীয়াংশ মানুষের জীবিকার অন্যতম মাধ্যম মাছ শিকার। ইলিশের মৌসুম এলেই এই এলাকায় একটা রমরমা অবস্থা বিরাজ করে।

পাথরঘাট সদর ইউনিয়ন, চরদুয়ানী, কাঠালতলী, কাকচিড়াসহ বঙ্গোপসাগরের মোহনা ও নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর মানুষ অধিকাংশই এখন পেশাজীবী জেলে। এখানে চোখে পড়ে কয়েক ধরনের ট্রলার–নৌকা। এগুলো তিন ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে প্রথম ভাগে ফেলা যায় বড় ট্রলারগুলো। এগুলো গভীর সমুদ্রে ইলিশ ধরতে যায়। এতে লোক থাকে ১৬–২২ জন। এ ধরনের নতুন ট্রলার জলে ভাসাতে ৪০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা খরচ হয়। সঙ্গে যোগ করতে হয় ১৫–৩০ লাখ টাকার জাল। ইঞ্জিন ও অন্যান্য খরচ আছে আরও ১০ লাখ টাকার।

মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা ট্রলারগুলো ‘ডুবা ট্রলার’ হিসেবে পরিচিত। এগুলো সমুদ্র মোহনা ও নদীতে ইলিশ ধরে। ভূমি থেকে অন্তত ৩৫–৪০ কিলোমিটার দূরে যায় এই ট্রলার। এই ট্রলারে লোক থাকে ৬–৮ জন। এই ধরনের ট্রলার জলে ভাসাতে খরচ পড়ে ৮–১০ লাখ টাকা। প্রতি মৌসুমে এই ট্রলার চালাতে অন্তত ৫০–৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। অন্যদিকে ছোট ইলিশ নৌকাগুলো সাধারণত নদীতে জাল ফেলে। কারেন্ট জাল ব্যবহার করে বলে এই নৌকাগুলো ‘নেটওয়ার্ক’ বলে পরিচিত। এই ইলিশ নৌকা জলে ভাসাতে খরচ পড়ে ২–৩ লাখ টাকা। ৪–৫ জন লোক হলে এই নৌকা চালানো যায়।

সরকারের খাতায় ইলিশ আহরণের হিসাব ঊর্ধ্বমুখী। জেলে-আড়তদারদের কেউ লাভে আছেন, কেউ লোকসানে। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। আয়–ব্যয়ের এই হিসাব সবার কাছে থাকলেও ইলিশ ধরতে গিয়ে শূন্য হাতে ফেরা, নিখোঁজ কিংবা প্রাণ হারানো জেলেদের খবর রাখেন কজন? নিষেধাজ্ঞা আসে, কোলাহল থামে, মলিন মুখে বাড়ি ফিরে যান বহু জেলে। আবার শুরু হয় তাদের সংকটের দিন। এই সংকট টিকে থাকার, পরিবার নিয়ে দুমুঠো খেয়ে–পরে বাঁচার।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ