রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পথ চলতে বেশি-কম সবারই চোখে পড়ে লাল রঙের একটি দানবাক্স। এতে লেখা আছে ‘মির্জাগঞ্জের মরহুম ইয়ার উদ্দিন খলিফা ছাহেব (রহ.) দরবার শরিফের মাজারে লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানার দানবাক্স’। বিশ্বাসের জায়গা থেকে হরহামেশা এই দানবাক্সে অর্থ দান করেন ভক্ত ও সাধারণ মানুষ। মজার তথ্য হলো, সারা দেশে এই দানবাক্স স্থাপন ও টাকা উত্তোলনের জন্য রীতিমতো ইজারার আয়োজন করে মাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি। এই ইজারা থেকে বছরে প্রায় ৩ কোটি টাকা আয় হয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
জানা গেছে, সারা দেশে ৩০ হাজারেরেও বেশি দানবাক্স রয়েছে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ইয়ার উদ্দিন খলিফা (রহ.) দরবার শরিফের মাজারের। এসব দানবাক্স থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য প্রতিটা জেলা, উপজেলা ও থানাভিত্তিক ইজারার ব্যবস্থা করে মাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি। ইজাদারেরা বছরে ছয়বার মাজার কমিটিকে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে বেশি টাকা উঠলে ইজারাদারের লাভ হয়। আর টাকা কম উঠলেও লোকসান গুনতে হয় ইজারাদারকে।
পটুয়াখালী শহরে মাজারের ২০০ দানবাক্স ইজারা নিয়েছেন মো. কালাম নামের এক ব্যক্তি। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শহরে আমার ২০০-এর মতো দানবাক্স রয়েছে। দুই মাস পর পর প্রতি দানবাক্স থেকে ১২ হাজার ৬০০ টাকা মাজার কমিটির কাছে জমা দিতে হয়। এই দুই মাসের মধ্যে কম অথবা বেশি পরিমাণ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে কি না, সেটা দেখা তাদের বিষয় না। মানুষ দান যা করুক, লাভ-লস সব আমার।’
পটুয়াখালীর সদর উপজেলায় দানবাক্সের টাকা উত্তোলন করেন নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আমি ২০০৩ সাল থেকে এই মাজারের দানবাক্সের টাকা ওঠাই। আগে দানবাক্স থেকে টাকা যা পাওয়া যাবে, তা থেকে একটি অংশ আমাদের দিত মাজার ব্যবস্থাপনা কমিটি। পরে সেটা বন্ধ করে তারা ইজারা পদ্ধতি চালু করেছে। এখন ৩০০-এর মতো দানবাক্স রয়েছে আমার, যদি টাকা কম আসে, তাহলে আমি ভর্তুকি দিই। আর যা বেশি হয়, তা আমার লাভ।’
ইজারার বিষয়টি স্বীকার করেছেন মাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদ মল্লিক। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাজারের নামে ৩০ হাজারেরও বেশি দান বাক্স রয়েছে। আর এই টাকা ওঠাতে সারা দেশে ১৫৬ জন লোক আছেন। ইজারাদাররা স্থান অনুযায়ী ৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত দুই মাস পর পর বছরে ছয়বার জমা দিয়ে থাকেন। বছরে ৩ কোটি টাকার মতো উত্তোলন হয়। আর দানবাক্স থেকে উত্তোলনকৃত টাকার পুরোটাই ব্যয় হয় এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের পেছনে।’