হোম > ছাপা সংস্করণ

চার দিন পর তাদের চুলায় আগুন

পীরগঞ্জ ও তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি

রংপুরের পীরগঞ্জের মাঝিপাড়া বড় করিমপুর জেলেপল্লিতে ঢুকতে চোখ পড়ল নন্দ রানীর চুলার দিকে। ঘর পুড়ে কয়লা হওয়া কাঠ দিয়েই তিনি চুলায় রান্না বসিয়েছেন। এগিয়ে যেতেই বললেন, ‘স্বামী রংপুরোত রিকশা ভাড়াত চালাছলো। অটোর তকনে প্যাটোল রিকশার ভাড়া কম। নিজের ভ্যান হইবে স্বামী স্বপ্ন দেখছিল। সেই স্বপ্ন পূরণ করতে ২০ দিন আগোত ৫০ হাজার টাকা ঋণ করে ভ্যান কিনি দিছনু। সেই ভ্যান পুড়ি গেইছে। হামরা এখন পথে বসছি। চার দিন পর আজ চুলাত আগুন দিছুন।’

নন্দ রানী, সুমতি রানী, সীতা রানী– সবারই ঘর পুড়েছে, স্বপ্ন পুড়েছে। কিন্তু নতুন করে বাঁচার স্বপ্নে আবার খড়কুটো জড়ো করছেন তাঁরা। আধা পোড়া কাঠ-কয়লাতেই জ্বালাচ্ছেন চুলা।

ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত রোববার রাতে পীরগঞ্জের মাঝিপাড়া বড় করিমপুর জেলেপল্লিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা চালানো হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় ২৪টি পরিবারের বাড়িঘর। ভাঙচুর লুটপাটও করা হয়।

পোড়া ঘরের জায়গায় নতুন করে ঘর তৈরিতে কাজ করছিলেন সুমতি রানী।

ময়লা সাফ করতে করতে সুমতি বলেন, ‘মোর তো সউগ শ্যাষ। ঘর গেইছে, গাভিন গরু মরছে। সরকার থাকি টিন, কাট, মিস্ত্রি দিছে। নয়া ঘর বানাওছে। তা-ও মোর মনটাত শান্তি নাই। যে ক্ষতি হইছে, তাক কি মোর পূরণ হইবে? স্বপ্নেও ভাবো নাই মোর ঘর-গরু ছাই হইবে।’

সীতা রানী ও তাঁর মেয়ে সুমি রানী ভাঙা চুলা মেরামত করে রান্না বসিয়েছেন। সেখানে কথা হয় মা-মেয়ের সঙ্গে। সুমি বলেন, ‘কত দিন আর সরকারি খাবার খাই। চাল, ডাল, সবজি পাছি তাক রান্না করুছি। ছাওয়া-পোয়াক নিয়া পেট ভরে খামো। নিজের রান্নার স্বাদই আলাদা।’

ঘরের ভাঙা চালায় নতুন টিন তুলতে স্বামীকে সহায়তা করছিলেন মিনতি রানী। তিনি বলেন, ‘মুসলিমরা তো আমাদের শত্রু নয়। হঠাৎ যে কী হলো, আমাদের সব শেষ করে দিল। হামলার দিন সব জাল নিয়ে গেছে। স্বামী এখন ঘরে বসে দিন কাটাচ্ছে। জাল না থাকায় মাছ ধরতে পারছে না। চাল, ডাল, কাপড়, ঘরেরটি সউগ পাইনো। তোমরা একখান জাল আনি দেও, মাছ মারি জীবন বাঁচামো।’

এদিকে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হিন্দুপল্লির অদূরেই বটেরহাট জামে মসজিদের সামনে আটক হওয়া ও আটক আতঙ্কে ঘর ছাড়া আশপাশের ৯টি গ্রামের পাঁচ শতাধিক নারী বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নারীরা বড় মজিদপুর, রাজারামপুর, নখারপাড়া, গারারে, করিমপুর কসবা, দাড়িকাপাড়া, বটেরহাট, খেদমতপুর, তালুকদারপাড়ার বাসিন্দা। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া খেদমতপুর এলাকার নাসিমা বেগম বলেন, ‘পুলিশের ভয়ে স্বামী চার দিন থাকি বাড়িত নাই। ঘর-সংসার নিয়া একাই আছি। ভয়ে রাতে ঘুমাই না। এভাবে আমরা বাঁচতে চাই না। আমরা এর একটা সুরাহা চাই।’

ঘটনাস্থলে থাকা পীরগঞ্জ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) একরামুল হক বলেন, ‘গ্রামের নারীরা তাদের নিরাপত্তাহীনতার কথা আমাদের বলেছে। আমরা তাদের কথা শুনেছি। আগামী রোববার তাদের সঙ্গে বসা হবে।’

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ