৬ জানুয়ারি সরকারপ্রধান হিসেবে টানা দায়িত্ব পালনের ১৬ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এ বছরের শেষে অথবা সামনের বছরের শুরুতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। দেশবাসীকে সতর্ক করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কিন্তু এখন থেকেই স্বাধীনতাবিরোধী, ক্ষমতালোভী, জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনকারী আর পরগাছা গোষ্ঠীর সরব তৎপরতা শুরু হয়েছে। এদের লক্ষ্য ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে পেছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা। গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করা। এরা লুণ্ঠন করা অর্থ দিয়ে দেশে-বিদেশে ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী এবং বিবৃতিজীবী নিয়োগ করেছে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কুৎসা রটিয়ে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এরা মিথ্যে এবং ভুয়া তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এদের মিথ্যাচারে বিভ্রান্ত হবেন না।’
গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলো এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেছেন, ‘সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, এমন কোনো উদ্ভট ধারণাকে প্রশ্রয় দেবেন না এবং ইন্ধন জোগাবেন না।’
একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের প্রত্যাশা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য বাংলাদেশে এই প্রথম একটি আইন পাস করা হয়েছে। সেই আইনের আওতায় সার্চ কমিটি করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনকে আর্থিক স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে। সরকার সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাবে।’
আওয়ামী লীগ জনগণের দল, জনগণের শান্তিতে বিশ্বাসী, জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জনগণ ভোট দিয়ে বিজয়ী করলে আওয়ামী লীগ দেশ গড়ার জাতীয় দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে। যদি বিজয়ী না করে, তাহলে আমরা জনগণের কাতারে চলে যাব। তবে, যেখানেই থাকি, আমরা জনগণের সেবা করে যাব।’
কিন্তু ষড়যন্ত্র করে কেউ যাতে জনগণের অধিকার কেড়ে নিতে না পারে, সেদিকে সবার সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ যাতে আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করে মানুষের জানমালের এবং জীবিকার ক্ষতিসাধন করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের দেশ এগিয়েছে অনেক। তবে আরও এগিয়ে নিতে হবে। একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অর্জন আমাদের লক্ষ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নানা অনুষঙ্গ ধারণ করে আমরা তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট গভর্মেন্ট, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট শিল্পকলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে রোবটিকস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো টেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জৈব প্রযুক্তি, অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। সব ক্ষেত্রে গবেষণার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আসুন, স্মার্ট দেশ গড়ার মাধ্যমে একটি সুখী-সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলে আমরা তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করি। এ দেশের সাধারণ মানুষের
মুখে হাসি ফোটাই।’
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য স্পষ্ট। কোনো কথা তিনি সাধারণত রাখঢাক করে বলেন না। তাই এসবের কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণেরও দরকার নেই। তবে দেখার আছে অবশ্যই। সময় শেষে নিশ্চয়ই হিসাব মেলাতে এসব বক্তব্য রেকর্ড হয়ে থাকবে।
সংযুক্তি: ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর শেখ হাসিনা এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘যাঁরা দলের সুবিধা নিয়েছেন কিন্তু দলের নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর নেননি, এবার তাঁদের তালিকা করা হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, সে যেই হোক না কেন। মুখে নৌকা, অন্তরে বিষ। মুখে মুজিব আদর্শ আর মনের ভেতরে নিজের স্বার্থ। আমি রাত-দিন পরিশ্রম করে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করি আর আপনারা কী করেন, তার হিসাব আমাকে নিতে হবে।’
জিজ্ঞাসা: ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি—চার বছরে এসে কি এই প্রশ্ন করা যায়, সেই তালিকা কি হয়েছে, যাঁরা দলের সুবিধা নিয়ে নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর নেননি? যাঁদের ‘মুখে নৌকা, অন্তরে বিষ’, যাঁরা নিজের স্বার্থে মুজিব আদর্শের কথা বলেন, তাঁদের কাছ থেকে হিসাব আদায়ের কোনো উদ্যোগ কি নেওয়া হয়েছে?
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা