হোম > ছাপা সংস্করণ

ভাড়ার ফাঁড়া!

রিক্তা রিচি

রাস্তাঘাটে কোনো বাস নেই। এটা গত শুক্রবার সকালের দৃশ্য। ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে পূর্বঘোষণা ছাড়াই ধর্মঘট ডেকেছে পরিবহন মালিক সমিতি। আমরা নিত্য যাত্রীরা পড়লাম বিপাকে। শুক্রবার অফিসে যাই। কারণ, আমার সাপ্তাহিক ছুটি রোববার। রিকশা কিংবা সিএনজি নিয়ে লোকজন গন্তব্যে পৌঁছেছে। এই সুযোগে সিএনজি ও রিকশাচালকেরা ভাড়া দ্বিগুণ, তিন গুণ বেশি নিয়েছেন। তারপরও একপ্রকার যুদ্ধ করে সিএনজি পেতে হয়। কোনো উপায়ান্তর না দেখে সাধারণ মানুষ সেসব হজম করেছে। তিন দিন চলল এভাবে। তারপর গত রোববার (৭ নভেম্বর) বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয়ে পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বিআরটিএর ভাড়া-নির্ধারণী কমিটির বৈঠকে ২৭ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

ডিজেলের দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশ। ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ২৭ শতাংশ। মানলাম, এ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে সিএনজিচালিত বাসও। কোনো কোনো রুটে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ ভাড়া! যাত্রীরা তা দিতে নারাজ হলে তর্কাতর্কি, হাতাহাতি হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ৫০ শতাংশ ভাড়া বেশি না দিলে বাস থেকে নেমে যেতে বলা হচ্ছে যাত্রীদের।

সেদিন দেখলাম, মোহাম্মদপুরের তিন রাস্তার মোড় থেকে ‘রজনীগন্ধা’ বাসের হেলপার হাঁকছেন: ‘যেখানেই যাবেন, ভাড়া ১৫ টাকা’। তিন রাস্তার মোড় থেকে বাসস্ট্যান্ড কিংবা ২৭ নম্বরে গেলেও ১৫ টাকা। অথচ এইটুকু পথের ভাড়া মাত্র ৫ টাকা। দূরত্ব তো বেশি নয়। এখন অবস্থা এমন হয়েছে যে, বাসে উঠে নেমে গেলেও ১৫ টাকা ভাড়া গুনতে হবে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফার্মগেট থেকে আসাদগেট যাওয়ার পথে দেখলাম একই অবস্থা মিরপুরগামী বাসগুলোয়। ফার্মগেট থেকে আড়ং পর্যন্ত ভাড়া ৫ টাকা। ঢাকা মহানগরীতে প্রতি কিলোমিটারে বাসভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২ টাকা ১৫ পয়সা। তাহলে ৫ টাকার ভাড়া বেড়ে হওয়ার কথা ৭ টাকা ১৫ পয়সা। কিন্তু দিতে হচ্ছে ১৫ টাকা। একে মগের মুল্লুক ছাড়া আর কী বলা যায়! অথচ আমরা তো বাস করছি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে। নাকি?

বুধবার সকালে ‘স্বাধীন’ বাসে করে মোহাম্মদপুর থেকে বনশ্রীতে এলাম। বাসটি সিএনজিচালিত কি না, যাত্রীরা জানতে চাইলে চালকের সহযোগী জানান, বাসটি ডিজেলচালিত। শুধু তা-ই নয়, এখন সব বাসের চালক-হেলপার দাবি করছেন তাঁদের বাস ডিজেলচালিত। লোকজন বলাবলি করছিল, কিছুদিন পর গ্যাসের দাম বাড়লে আবারও ভাড়া বাড়িয়ে বলা হবে বাস গ্যাসে চলে।

এক তথ্যে জানা যায়, ঢাকায় মাত্র শতকরা পাঁচ ভাগ বাস ডিজেলচালিত। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অতিরিক্ত মুনাফা আদায়ের এই খামখেয়ালিপনা বন্ধের কি কেউ নেই?

ডিজেলের দাম বাড়ার আগেও দেখেছি, ‘স্বাধীন’ বাসে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্ধেক ভাড়া নেওয়া হতো। অথচ এখন বলা হচ্ছে ‘হাফ পাস চলবে না’।

এখানেই শেষ নয়। ডিজেলচালিত বাসের ভাড়া বেড়েছে বলে নিজের ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়ে নিচ্ছেন সিএনজি ও রিকশাচালকেরা। বনশ্রী সি-ব্লক থেকে রামপুরা ব্রিজের রিকশাভাড়া ছিল ২০ টাকা। এক রিকশায় তিনজন উঠলে ভাড়া দিতাম ৩০ টাকা। ডিজেলের দাম বাড়ার পর এক দিন আমি ও আমার দুই সহকর্মী রিকশায় উঠলাম। ব্রিজের অনেক আগেই আমাদের নামিয়ে দিয়ে ভাড়া দাবি করা হলো ৫০ টাকা। ২০ টাকার ভাড়া এক লাফে ৫০ টাকা! এই অস্বাভাবিকতাও আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে। মেনে নেওয়া আর মানিয়ে নেওয়াই যেন আমাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিএনজিচালকদের কথা আর কী বলব। মানুষের বিপদ দেখলে তাঁদের মুখে যেন প্রশান্তির হাসি ফুটে ওঠে। দ্বিগুণ, তিন গুণ ভাড়া আদায় করেন তাঁরা মহা জোশে।

আমরা আমজনতা আসলে বেপরোয়া সংঘশক্তির কাছে নিরুপায় আত্মসমর্পণে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি। ডিজেলের দাম বাড়ায় বাসমালিকেরা ধর্মঘট করে বাসভাড়া যতটুকু বাড়িয়ে নিলেন, আদায় করা হচ্ছে তার চেয়ে ঢের বেশি। কিন্তু আমাদের তো আয় বাড়ছে না। আমাদের সংকটের কথা কাকে বলব? কেউ কি তা শুনবে?

রিক্তা রিচি, কবি ও সাংবাদিক

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ