নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের নাম বললে কেউ তাঁকে চিনবে কি না, জানি না। কিন্তু যদি বলা হয়, এম এন রায়, তাহলে একনামেই লোকে তাঁকে চিনবে। ১৪-১৫ বছর বয়স থেকেই তিনি বৈপ্লবিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। প্রথম মহাযুদ্ধের সময় ছদ্মবেশ ও ছদ্মনামে তিনি বিদেশ পাড়ি দেন। তখন তাঁর নাম হয় মানবেন্দ্রনাথ রায় বা এম এন রায়। একসময় পৌঁছে যান যুক্তরাষ্ট্রে, সেখানে দীক্ষিত হন মার্ক্সবাদে। রুশ বিপ্লবের সময় ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিনের আমন্ত্রণে তিনি রাশিয়া গিয়েছিলেন। লেনিনের মৃত্যুর পর নানা চক্রান্তের কারণে তিনি কমিউনিস্ট আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সে আরেক কাহিনি।
সালাহউদ্দীন আহমদ এম এন রায়কে প্রথম দেখেছিলেন ১৯৩৮ সালে। তাঁর বই ‘হিস্টোরিকাল রোল অব ইসলাম’ খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল মুসলিম শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এম এন রায় ঢাকা এসেছিলেন। ঠিক হয়েছিল তাঁর বক্তৃতা হবে ঢাকা বার লাইব্রেরি হলে। আর তাতে সভাপতিত্ব করবেন ড. ইৎরাত হোসেন জুবেরী। এম এন রায়ের প্রথম বক্তৃতা হওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যা ছয়টায়। তাঁকে সভায় নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পেলেন সালাহউদ্দীন আহমদ। রমনা রেস্ট হাউসে পৌঁছানোর পর জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার একটি চিঠি পেলেন তিনি, জুবেরী সাহেব অসুস্থ। সভায় আসতে পারবেন না। একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
চিন্তিত সালাহউদ্দীন আহমদকে জিজ্ঞেস করলেন এম এন রায়, ‘কী হয়েছে?’
সমস্যার কথা শুনে হেসে তিনি বললেন, ‘কিছু ভেব না সালাহউদ্দীন। তুমি সভাপতি হবে, বক্তৃতা তো দেব আমি।’
একেবারে হকচকিয়ে গেলেন সালাহউদ্দীন আহমদ। কিন্তু কাজটা করতে হলো। সভাপতি ভাষণ দেন সভার পর। কিন্তু বক্তা যেখানে এম এন রায়, সেখানে সালাহউদ্দীন আহমদ কি আর সেটা করতে পারেন? তিনি মাইক্রোফোন নিয়ে বললেন, ‘এম এন রায় বক্তৃতা করার পর আমার আর কিছুই বলার থাকবে না। তাই সভাপতির ভাষণ আগেই দিয়ে নিচ্ছি।’ এম এন রায় বক্তৃতা করলেন ইউরোপে রেনেসাঁ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে বিপ্লব সাধিত হয়েছিল, তা নিয়ে।
সূত্র: সালাহউদ্দীন আহমদ, ফিরে দেখা, পৃষ্ঠা ৯৩-৯৫