ছিলেন দিনমজুর। এখন মাসে আয় করেন লাখ টাকা। অবিশ্বাস্য হলেও এ ঘটনা সত্য। মেহেরপুরের রকুনুজ্জামান মৌ খামার করে শুধু নিজেরই ভাগ্য বদল করেননি, কর্মসংস্থান জুগিয়েছেন আরও অনেকের। এখন তাঁর খামারে মৌ বাক্সের সংখ্যা ১০০। খাঁটি মধু উৎপাদন করায় শুধু জেলা নয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় যাচ্ছে তাঁর উৎপাদিত মধু।
জানা গেছে, অভাব অনটনে মেহেরপুর সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী কুতুবপুর গ্রামের রকুনুজ্জামানের সংসার চলত। প্রথমেই মাঠে কাজ করে চালাতেন সংসার। ২০০২ সালে মাঠের কাজ বন্ধ করে শুরু করেন গ্রামে গ্রামে কাপড় বিক্রি। ব্যবসায় সমস্যা হওয়ায় চিন্তায় পড়ে যান রকুনুজ্জামান। মানুষের কাছে যে পরিমাণ টাকা পড়ে ছিল সেটিও আদায় করতে ব্যর্থ হন। বেছে নেন ভ্যান চালানোর কাজ। কিন্তু পরিবার কিছুতেই এটি মেনে নেননি। কি করে সংসার চালাবেন এই ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়ের রকুনুজ্জামান। ২০০২ সালে খোঁজ পান গ্রামের জুয়েল হোসেনের। তিনি বাড়িতে কয়েকটি বাক্স নিয়ে করেন মৌচাষ। সেখান থেকে বিনা টাকায় একটি বাক্স নেন রকুনুজ্জামান। শুরু করেন মৌ চাষ। এক বছরের মধ্যে তার খামারে বাক্সের সংখ্যা দাঁড়ায় ৮ টি। প্রথম তিন বছর কোনো লাভের মুখ দেখতে পারেননি। উল্টো পড়েছেন লোকসানে। এরপরও হাল ছাড়েননি।
রকুনুজ্জামান জানান, দেশি ছোট জাতের এ মৌমাছি চাষ করার সঙ্গে সঙ্গে খুঁজতে থাকি উন্নত জাতের মৌমাছি। অবশেষ ২০১৪ সালে মাগুরা জেলার আবু বক্করের সন্ধান পান। সেখান থেকে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে মেলিফেরা নামের ৭টি বাক্স কিনে আনেন। নব উদ্যমে শুরু করেন মৌচাষ। মাত্র এক বছরের মাথায় তার খামারে বাক্সের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০০ টিতে। এর বেশি হলে বিভিন্ন জায়গায় বাক্স বিক্রি করতে থাকেন।
রকুনুজ্জামান আরও জানান, ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত মাসে ৪০ মণ করে মধু উৎপাদন করেন তিনি। এ সময় মাঠে তেল জাতীয় ফসল লিচু ও আমের মুকুল থাকায় বেশি মধু উৎপাদন করতে পারেন। অন্য মাসগুলোতে গড়ে মধু উৎপাদন হয় ২০ মন করে। এখন তাঁর খামারে কাজ করেন ৫ থেকে ৭ জন যুবক।
রকুনুজ্জামান বলেন, ‘এখন যে মধু উৎপাদন হচ্ছে তা বিক্রি করি ৫০০ টাকা কেজি দরে। চাহিদা থাকায় বাড়ি থেকে মধু বিক্রি হয়ে যায়। আবার দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মুঠোফোনে মধুর অর্ডার দেওয়া হয়। কুরিয়ারে পাঠিয়ে দিই। আমার উৎপাদিত মধু খাঁটি হওয়ায় বাজারে চাহিদাও রয়েছ। ডিসেম্বর থেকে মার্চ ছাড়া বাকি সময়ে আমি ঔষধি মধু উৎপাদন করি। এ মধুর চাহিদা থাকে বেশি। এ সময় মধু কম উৎপাদন হলেও এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করে। মধু চাষ করে আমি মাসে লাখ টাকার ওপরে আয় করি।’
গাংনী উপজেলার গাড়বাড়িয়া গ্রামের শওকত হোসেন বলেন, ‘রকুনুজ্জামানের উৎপাদিত মধু খাঁটি হওয়ায় আমরা সেখান থেকে মধু কিনে নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে পাঠাই।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, ‘কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে রকুনুজ্জামানকে পরামর্শ দেওয়া হয়। জেলার অন্য মৌ খামারিদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তবে এখন পর্যন্ত রকুনুজ্জামান ছাড়া মৌচাষে কেউ সফল হতে পারেনি।’