সৈয়দ আবদুল হাদীর মাছ ধরার নেশাটা ছিল খুবই জোরালো। এমনও দিন গেছে, যেদিন মাছ ধরতে বসে রেকর্ডিংয়ের কথা ভুলে গেছেন। মাছ ধরার মাচা থেকে তাঁকে তখন তুলে নিয়ে যাওয়া হতো রেকর্ডিং স্টুডিওতে।
একবার আবদুল হাদী খবর পেলেন ঢাকার অদূরে পাঁচদোনার এক ছোটখাটো জমিদারবাড়ির পুকুরে বড় বড় মাছ আছে। সেই জমিদারবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলো। তিনি সানন্দে মাছ ধরার অনুমতি দিলেন। সৈয়দ আবদুল হাদী, রফিকুল আলম, কাদেরী কিবরিয়া আর লিনু বিল্লাহ চললেন মাছ ধরতে। কিন্তু ভাগ্য খুব ভালো ছিল না। পুকুরের নিচে ছিল বাঁশের কঞ্চি পোঁতা, তাই বারবার সুতো কেটে যেতে থাকল। তবে জমিদারবাবু সন্ধ্যায় ভালো আপ্যায়ন করলেন। সে সময় তিনি তাঁর দুই কন্যাকে দেখিয়ে বললেন, উপযুক্ত পাত্রের সন্ধান পেলে তাঁরা যেন জানান। তাতে আরেকবার এই জমিদারবাড়িতে এসে মাছ ধরার সুযোগের সৃষ্টি হলো।
এখন তো একজন পাত্র জোগাড় করতে হবে। তখনো সুবীর নন্দী বিয়ে করেননি। সৈয়দ আবদুল হাদী তাঁকে ধরলেন। বললেন, ‘তোমার জন্য বেশ ভালো পাত্রীর সন্ধান পেয়েছি। চলো, দেখে আসি।’ তাতে রথ দেখাও হবে, কলা বেচাও হবে।
সুবীর নন্দী চললেন সৈয়দ আবদুল হাদীদের সঙ্গে। এবারও মাছ ধরার সরঞ্জাম নিয়ে তাঁদের যাত্রা। বেশ কয়েকটি বড় মাছ জালে ধরাও পড়ল। দুপুরে পোলাও-কোর্মাও বাদ গেল না। পাত্রী দেখা হলো। সৈয়দ আবদুল হাদী জিজ্ঞেস করলেন সুবীর নন্দীকে, ‘পাত্রী পছন্দ হয়েছে?’
সুবীর বললেন, ‘পছন্দ হয়েছে, তবে ছোট মেয়েটিকে। বড় মেয়েকে নয়।’
জমিদারবাবুকে সে কথা জানানো হলো। তিনি চিন্তিত হয়ে বললেন, ‘তা কী করে হয়, বড়টিকে রেখে ছোটটিকে বিয়ে দিই কী করে?’
বিয়ের ঘটকালি বিফলে গেল। কিন্তু একটি সুন্দর স্মৃতি হিসেবে তা থেকে গেল সৈয়দ হাদীর মনে।
সূত্র: সৈয়দ আবদুল হাদী, জীবনের গান, পৃষ্ঠা ৬৮-৬৯