ভূপেন হাজারিকা ছিলেন গণসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী। তাঁর জন্ম ভারতের আসামের সাদিয়ায় ১৯২৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। ভূপেন শিক্ষাজীবন শুরু করেন আসামের সোনারামে। এরপর গুয়াহাটির কটন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক এবং বানারসের হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন।
শৈশবেই তিনি স্থানীয় বরগীত, গোয়ালপাড়ার গান, চা-মজদুরের গান, বিহুগীতসহ গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে প্রভাবিত হন। তিনি ভারতের বিখ্যাত ওস্তাদ বিষ্ণুপ্রসাদ রাভার হাত ধরে সংগীতের ধারায় আসেন।
১৯৫২ সালে নিউইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পড়াশোনা শেষে তিনি ভারতে ফিরে গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন। পরে তিনি কলকাতায় গিয়ে চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা শুরু করেন। পাশাপাশি ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সাংস্কৃতিক সংগঠন ভারতীয় গণনাট্য সংঘ—আইপিটিএর সঙ্গে যুক্ত হন। ভূপেন হাজারিকার মার্ক্সবাদী জীবন-দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠার পাশাপাশি গানের ওপর প্রভাব তৈরির ক্ষেত্রে বিদেশি সংগীতজ্ঞের প্রভাব কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সময়ই তাঁর পরিচয় হয় কিংবদন্তি শিল্পী পল রোবেসনের সঙ্গে। পল রোবেসনের ‘ও মিসিসিপি’ গানের প্রভাবেই পরবর্তী সময়ে তিনি ‘বিস্তীর্ণ দুপারের, অসংখ্য মানুষের—হাহাকার’ গানটি রচনা করেছিলেন।
তাঁর কয়েকটি খ্যাতি পাওয়া গান হলো ‘মানুষ মানুষের জন্যে, জীবন জীবনের জন্য’, ‘আমায় একজন সাদা মানুষ দাও, যার রক্ত সাদা’, ‘আজ জীবন খুঁজে পাবি, ছুটে ছুটে আয়’, ‘গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা’, ‘শরৎ বাবু, খোলা চিঠি দিলাম তোমার কাছে’, ‘সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, চেতনাতে নজরুল’ ইত্যাদি। এ গানগুলো মানুষের মধ্যে জাতপাত, বর্ণবাদবিরোধী ও ধর্মীয় অসাম্প্রদায়িকতার মন্ত্র দেয়।তিনি
জীবনের প্রথম থেকে সমাজতন্ত্রে আস্থাশীল থাকলেও শেষ ভাগে হিন্দুত্ববাদী বিজেপিতে যোগ দেন। ২০০৪ সালে গুয়াহাটি থেকে নির্বাচনেও দাঁড়ান। তাঁর ‘মানুষ মানুষের জন্যে’ গানটি বিবিসির শ্রোতা জরিপে সর্বকালের প্রথম ১০টি জনপ্রিয় গানের মধ্যে স্থান পেয়েছিল।
ভূপেন হাজারিকা ২০১১ সালের ৫ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।