সরকারের অগ্রাধিকারমূলক একটি হলো চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ। এই রেলপথ নির্মাণে বরাদ্দও বিপুল। ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার রেলপথ প্রকল্প নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি। রেলপথটি আগামী অক্টোবরে উদ্বোধনের কথা।
কিন্তু উদ্বোধনের আগেই সাম্প্রতিক বন্যার তোড়ে এই রেলপথের কোথাও কোথাও দেবে গেছে। পাথর সরে গেছে অনেক জায়গায়।এমনকি রেলবিটও খুলে গেছে।
শনিবার আজকের পত্রিকার প্রথম পাতায় ‘ট্রেন চলার আগেই দেবে গেল লাইন’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ভারী বর্ষণ, জোয়ার আর পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবানসহ ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এখন পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে প্রকট আকারে প্রকাশ হচ্ছে বন্যার ক্ষত। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার নতুন রেলপথে সেই ক্ষত যেন আরও স্পষ্ট।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া অংশে গত শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, সাতকানিয়ার তেমুহানি ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার পাঠানপুল ও কেরানিহাট অংশে প্রায় তিন কিলোমিটারজুড়ে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আদার মা মাজার থেকে পাঠানপুল পর্যন্ত দুই কিলোমিটার রেলপথের অন্তত ১০টি অংশে পাথর সরে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ২৪৫টি কালভার্ট ও ৩৯টি রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু আদার মা মাজার থেকে মৌলভির দোকান পর্যন্ত দুই কিলোমিটার এলাকায় মাত্র দুটি কালভার্ট দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষ অস্বাভাবিক জোয়ার, নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি দেখে থাকলেও অস্বাভাবিক বন্যা দেখল এবারই প্রথম। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন নির্মিত রেলপথের কারণেই এই বন্যা বলে অনেকে অভিযোগ করলেও রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক বলেছেন, রেলপথের কারণে পানি আটকে বন্যা হওয়ার কারণ নেই।
প্রশ্ন হলো, তাহলে বন্যা কেন হলো? রেলপথটি তৈরি হওয়ার আগে তো এমন বন্যা হতে দেখা যায়নি। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে এবার কয়েক সপ্তাহ ধরে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হওয়ার স্বাভাবিক পথ রুদ্ধ হওয়ার কারণেই কি বন্যা হয়নি?
এই রেলপথ প্রকল্প প্রণয়নের আগে পানি ব্যবস্থাপনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কি বিবেচনা করা হয়েছে? স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি বলেছেন, ‘বহু বন্যা, সাইক্লোন দেখেছি। কখনোই ঘরের চালার ওপর এভাবে পানি উঠতে দেখিনি। রেলপথের কারণে এবার পানি নামতে পারছে না।’ বুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. সামছুল হকও বলেছেন, নিষ্কাশনের পথে রেলের স্থাপনা তৈরি হয়েছে। রেলপথও স্থলভাগ দিয়ে গেছে আড়াআড়িভাবে। এতে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। রেলপথের জন্যই বন্যা—এটা প্রকল্প কর্তৃপক্ষ স্বীকার না করলেও অন্য অভিজ্ঞজনেরা মনে করছেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে এবারের বন্যা প্রাকৃতিক নয়, মানুষের সৃষ্টি।
কক্সবাজার রেল প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, এক থেকে দেড় কিলোমিটার রেললাইন সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি নেমে গেলে সংস্কার করা হবে।
প্রকল্প পরিচালক নিজের টাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেননি বলে এবং দায় স্বীকারে অনভ্যস্ত বলে রেলপথের ক্ষতি তাঁর কাছে ‘সামান্য’ বলে মনে হলেও এটা আসলে সামান্য ক্ষতি নয়।