চট্টগ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন প্রায় ১০ হাজার মানুষ। বারবার উচ্ছেদ করার পরও থামানো যাচ্ছে না এসব অবৈধ বসতি স্থাপন। এবার তাই ভিন্ন পথে হাঁটছে প্রশাসন। এসব বসতির পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ কার্যক্রম তদারকির জন্য গঠিত কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় ২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অবৈধ সংযোগগুলো চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসনের কাছে জমা দিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তালিকা পাওয়ার পর সংযোগ বিচ্ছিন্নে অভিযান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এরপর করা হবে অবৈধ বসতি উচ্ছেদ।
তদারকি কমিটির সদস্যরা মনে করছেন, একদিক থেকে উচ্ছেদ করলে অন্যদিকে বসতি গড়ছে লোকজন। পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলে তাঁরা এমনিতেই সরে যাবে।
কোথায় কত বসতি: জেলা প্রশাসনের ২০১২ থেকে ২০১৪ সালের তিন বছরের হিসাবে চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি ২৮ পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি ছিল। তবে ২০১৯ সালে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোর তালিকাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ওই বছর ১৭টি পাহাড়কে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ ১৭ পাহাড়ের মধ্যে ১০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন এবং ৭টি সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও বিভাগের। এসব পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাস করছে ৮৩৫ পরিবারের প্রায় ১০ হাজার মানুষ। তাঁরা অবৈধভাবে বাস করলেও আছে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ। এসব স্থাপনা করে যাঁরা ভাড়া দিয়েছেন তাঁরা বিভিন্ন সংস্থার অসাধু কর্মীদের সহযোগিতায় এসব সংযোগ নিয়েছেন।
বর্তমানে একে খান অ্যান্ড কোম্পানি পাহাড়ে ২৬টি, হারুন খান সাহেবের পাহাড়ে ৩৩, কৈবল্যধামের বিশ্ব কলোনি পাহাড়ে ২৮, লেকসিটি আবাসিক এলাকাসংলগ্ন পাহাড়ে ২২, আকবার শাহ আবাসিক এলাকাসংলগ্ন পাহাড়ে ২৮, পরিবেশ অধিদপ্তরসংলগ্ন সিটি করপোরেশন পাহাড়ে ১০, পূর্ব ফিরোজ শাহ ১ নম্বর ঝিলসংলগ্ন পাহাড়ে ২৮, পলিটেকনিক কলেজসংলগ্ন পাহাড়ে ৪৩, মধু শাহ পাহাড়ে ৩৪, ফয়েজ লেক আবাসিক এলাকাসংলগ্ন পাহাড়ে ৯, ফরেস্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটসংলগ্ন পাহাড়ে ৩৩৪, মতিঝরনা ও বাটালি হিলসংলগ্ন পাহাড়ে ১৬২, লালখানবাজার জামেয়াতুল উলুম মাদ্রাসাসংলগ্ন পাহাড়ে ১১, এম আর সিদ্দিকীর পাহাড়ে ৮, মিয়ার পাহাড়ে ৩২, ভেড়া ফকিরের পাহাড়ে ১১ ও ট্যাংকির পাহাড়ে ১৬টি পরিবার অবৈধভাবে বসবাস করছে।
গতকালের সভায় ওয়াসা, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। তদারকি কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ নাজমুল আহসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সংস্থাগুলোকে পাহাড়ে কতটি অবৈধ সংযোগ আছে তা চিহ্নিত করে আমাদের জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর অবৈধ সংযোগ ও বসতি উচ্ছেদ করা হবে।’ বর্ষা শুরুর আগেই এ কার্যক্রম শেষ করার আশা প্রকাশ করেন তিনি।
২০০৭ সালের ১১ জুলাই একদিনের ভারী বর্ষণে মহানগরী ও এর আশপাশের এলাকায় পাহাড়ধসে পড়ে। এতে প্রাণ যায় ১২৯ জনের। এ দুর্ঘটনার পর পাহাড় সুরক্ষায় নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি তখন পাহাড় সুরক্ষায় বেশ কিছু সুপারিশও দেয়। তবে এসব সুপারিশের কোনোটাই বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে পাহাড় থেকে সরেনি অবৈধ বসবাসকারীরাও।
তবে এবার শুধু সিদ্ধান্ত নেওয়া নয়, এর বাস্তবায়নও করা হবে বলে জানিয়েছেন মোহাম্মদ নাজমুল আহসান। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না পাহাড়ধসে আর কোনো মৃত্যু হোক। যে কোনোভাবে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করব।’