হোম > ছাপা সংস্করণ

বিশ্ব বলয়ে বাংলাদেশ ও তার নির্বাচন

অজয় দাশগুপ্ত

আমেরিকা এখনো বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকলেও তার জোয়ারে ভাটা পড়েছে। চীন, ভারত, রাশিয়া, জাপান, ব্রাজিলসহ আরও অনেক দেশের বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা ও ইউরোপের ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ায় আমেরিকা সত্যি এক নম্বর কি না, তা নিয়ে মতবিরোধ থাকতেই পারে। শুরুতেই বলি, আমেরিকা কিন্তু তারপরও আমেরিকা। কারণ—তার অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র আর মেধার বিস্তার। এটা সবাই জানি, দুনিয়ার সেরা মেধা সে দেশে যায়, আশ্রয় নেয়। অথবা সে দেশে থেকেই ‘নম্বর ওয়ান’ হয় কিংবা ‘নম্বর ওয়ান’ পদটি ধরে রাখার জন্য আমেরিকান হয়। এই যাত্রা পুরোনো।

একসময় সোভিয়েত ইউনিয়ন বা পূর্ব ইউরোপের কমিউনিজম সে দেশগুলোর মানুষদের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছিল। বস্তুত অবরুদ্ধ সেসব মানুষ সুযোগ পেলেই আমেরিকায় পাড়ি দিত। অলিম্পিক বিজয়ী নাদিয়া থেকে আরও অনেক তারকাই আমেরিকাকে বেছে নিয়েছিলেন। তা ছাড়া জ্ঞান, বিজ্ঞান, খেলাধুলা, সিনেমা—সব বিষয়েই আমেরিকা এখনো সেরা। আপনি হলিউড স্বীকৃত না হলে কীভাবে বড় অভিনেতা হবেন? হোয়াইট হাউসের প্রধানকে মানে না এমন দেশ বিরল। ইচ্ছা-অনিচ্ছায় মানাটাই যেন নিয়ম। 

মজার বিষয়, এই আমেরিকার ভূমিকা আমাদের মতো দেশের বেলায় সব সময়ই দ্বিমুখী। সবচেয়ে বড় যে ভুল তারা করেছিল তা হচ্ছে একাত্তরে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও সংগ্রামকে অবহেলা করা। তারপর ছিল বিরোধিতা। পাকিস্তান আর আমেরিকা তখন হরিহর আত্মা। তাদের গলায়-গলায় ভাব। আমরা যারা একাত্তর দেখেছি, আমরা জানি কতটা ভয়ংকর রূপ ছিল আমেরিকার। তাদের তখনকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিসিঞ্জার আমাদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের দুশমন ছিলেন। সরাসরি না পারলেও হেন কোনো কাজ নেই যা করে পাকিস্তানকে শক্তি জোগায়নি। শেষ দিকে সপ্তম নৌবহরও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বঙ্গোপসাগরে। ভাগ্য ভালো তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল। ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর মতো লৌহমানবী। তাঁদের দূরদর্শিতা আর নেতৃত্বে আমেরিকা, চীন, পাকিস্তান পরাজিত হয়। একটা বিষয় দেখুন, চীন আর আমেরিকা চিরকাল সাপে নেউলে। অথচ আমাদের দেশের বিরোধিতার বেলায় তারা ছিল এক জোট। আমেরিকা একাত্তরে পরাজিত হলেও পঁচাত্তরে ছোবল মারতে পিছপা হয়নি। উপমহাদেশে তার পরাজয়ের গ্লানি আমেরিকা ভুলতে পারেনি আজও। 

আরেকটা মজার বিষয় হচ্ছে, আমেরিকার গণতন্ত্র আর দেশটির প্রভাব। আমেরিকার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করে আমাদের চেয়ে বেশি লোকসান আর মৃত্যুর রেকর্ড নিয়ে স্বাধীন হয়েছে ভিয়েতনাম। আমেরিকা ভিয়েতনামে নাপাম বোমা মারতেও দ্বিধা করেনি। ভিয়েতনামের জাদুঘরে দেখেছি বোমা হামলার পর নগ্ন শরীরে ছুটে যাওয়া মানুষের বীভৎস করুণ সব ছবি। অথচ সেই আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব করার জন্য মুখিয়ে আছে ভিয়েতনাম। সে দেশে গিয়ে দেখলাম চীনের প্রেসিডেন্ট আসছেন বলে না আছে কোনো উৎসাহ, না কোনো উল্লাস। সব নিয়মমাফিক আয়োজন। অথচ ওবামা আসবেন শুনেই তাদের কী উল্লাস! এটাই আমেরিকা। আমরা চাই বা না চাই, তাদের এড়িয়ে চলা অসম্ভব। আমাদের দিকে তাকালেও বুঝতে পারা যায়। দেশ স্বাধীন হয়েছিল ঘোর আমেরিকা বিরোধিতার মাধ্যমে। সেই বিরোধিতা কি টিকল? দেশে তখন সমাজতন্ত্র প্রায় আসি আসি করছে, অথচ তিয়াত্তর থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল আমেরিকা-যাত্রা।

আজ এত বছর পর আমেরিকার বিরোধিতা আবার নানা কারণে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানো এবং নিষেধাজ্ঞা নিয়ে সরগরম রাজনীতি। এটা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশের রাজনীতি ও ভোটাভুটিতে এদের নাক গলানো পুরোনো বিষয়। মূলত গণতন্ত্রের চর্চা ও ভোটে অনিয়মের কারণেই তা হয়। বাংলাদেশের আগের নির্বাচনগুলোতেও এরা নাক গলাত। কিন্তু ২০০৮ বা ১৯৯৬ সালের নির্বাচন নিয়ে তা পারেনি।

এবার তারা আটঘাট বেঁধে নেমেছে। কিন্তু তাদের কূটচাল বা কূটকৌশল সহজে হালে পানি পাবে না। বিশ্বরাজনীতি ও সমীকরণে বাংলাদেশের গুরুত্ব এখন অনেক বেশি। তার উন্নয়ন সহযোগী চীন। তার সঙ্গে আছে ভারত। এরাও এখন বড় শক্তি; বরং বহু ক্ষেত্রে আমেরিকাও এদের কাছে অসহায়। ফলে চাইলেই যা খুশি তা করা অসম্ভব। 

তারপরও আমেরিকাকে চটানো অনুচিত। তারা অঘটন ঘটাতে ভালোবাসে। অনেকেই জানেন সে দেশের রাষ্ট্রক্ষমতা মূলত কয়েকটি এজেন্সির হাতে। তারাই এই ফেডারেল রাষ্ট্রের চালক। সিআইএ সে কারণে কোথায় কী করে তা হয়তো সরকারও জানে, ঘটনা ঘটার পর বা অব্যবহিত পূর্বে। বাংলাদেশের এখন কোনো ঝুঁকি নেওয়ার সময় হাতে নেই। 

একদিকে উন্নয়ন, অন্যদিকে বিশ্ব বাস্তবতায় মূল্যবৃদ্ধি ও যুদ্ধ-মহামারির জন্য ভোগান্তি। এসব সমস্যার সমাধান কঠিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর মেধা ও বিচক্ষণতায় হাল ধরে আছেন। তিনি জানেন কীভাবে সামাল দিতে হয়। তারপরও বহির্বিশ্বে এবং দেশে একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী আমেরিকাসহ নানা দেশের সহযোগিতা নিয়ে অপকর্মে লিপ্ত হতে মরিয়া। যদিও তা হবে বলে মনে হয় না। তাদের মূল উদ্দেশ্য শেখ হাসিনার সরকার হটানো। উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বা সম্মান তাদের কোনো বিষয় না, তারা চায় ক্ষমতা।

এসব লোভীর হাতে রাজনীতি থাকলে দেশ ফের পিছিয়ে পড়বে। একই সঙ্গে সরকারি দলেরও সাবধান হওয়া উচিত। হাইব্রিড নামে পরিচিত নেতাদের দৌরাত্ম্যে দেশবাসী অতিষ্ঠ। এ ছাড়া অনিয়ম, লুটপাট ও অত্যাচারের কাহিনিও বহুশ্রুত। যতই নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, তাদের উৎপাতও বাড়বে। তাই ঘরে-বাইরে সাবধানতার বিকল্প নেই। নিজেদের ভেতর মারামারি, মূল শত্রু বাদ রেখে নিজেদের ভেতর হানাহানি সুফল বয়ে আনবে না।

আমেরিকার দাপট আগের মতো না থাকলেও তাকে খেপিয়ে কাজ নেই। কারণ তারা উল্টোযাত্রায় পারঙ্গম। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও পথচলায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক হয়ে উঠলে কেউই কোনো কথা বলার সাহস পাবে না। বন্ধ হোক দেশের বাইরে অপপ্রচার ও দলীয় নেতা নামধারীদের উগ্র আচরণ। তৈরি হোক সুন্দর ও সহজ বাতাবরণ।  

মানুষ অপেক্ষায় দিন গুনছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

যুক্তরাষ্ট্র-চীনের সমালোচনা জাতিসংঘের উদ্বেগ

ভারতের হামলা, পাকিস্তানের প্রস্তুতি

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ