ফয়েজ আহমদ ছিলেন একাধারে সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যে কজন অনন্য কৃতিত্বের দাবিদার, তাঁদেরই অন্যতম একজন তিনি।
ব্রিটিশ আমলে তরুণ বয়সেই অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন ফয়েজ আহমদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাড়ি থেকে পালিয়ে ব্রিটিশ বিমানবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কিশোর বয়সেই বামপন্থী রাজনীতির প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে সাংবাদিকতা শুরু করেন। এরপর একে একে ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদ, পূর্বদেশ ও ইনসাফে কাজ করেন। পাকিস্তান সাহিত্য সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ১৯৫০ সালে দিল্লি সাহিত্য সম্মেলনে যোগ দেন। সেই বছর তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় ‘হুল্লোড়’। ১৯৭১ সালে ‘স্বরাজ’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি জাতীয় সংবাদ সংস্থার প্রথম প্রধান সম্পাদক নিযুক্ত হন।
১৯৬০ সালে জেলে থাকা অবস্থায় অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি তাঁকে সদস্যপদ প্রদান করে। পার্টির নির্দেশে ১৯৫৪ সালে বিনা পাসপোর্টে তিনি ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক যুব সম্মেলনে যোগ দেন। পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খানের আমলে তিনি চার বছর কারাবন্দী ছিলেন। একইভাবে তিনি সামরিক শাসক এরশাদের আমলে কারাগারে ছিলেন। রাজনৈতিক কারণে তিনবার দীর্ঘ সময়ের জন্য তাঁকে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ জীবন বেছে নিতে হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের সংবাদ সারা বিশ্বে প্রচারের জন্য তিনি কাজ করেছেন।
শহীদজননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গঠিত গণ-আদালতের অন্যতম একজন বিচারক ছিলেন ফয়েজ আহমদ। তিনি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। জাতীয় কবিতা উৎসবের প্রথম পাঁচ বছর আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি ঢাকার সুবৃহৎ আর্ট গ্যালারি ‘শিল্পাঙ্গন’-এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
বর্ণাঢ্য সাংবাদিকতাজীবনে তাঁর আত্মজৈবনিক রচনা ‘মধ্যরাতের অশ্বারোহী’ সাপ্তাহিক বিচিত্রায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের পর প্রচণ্ড আলোড়ন তুলেছিল।
অকৃতদার এই মানুষটি ২০১২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে দেহ এবং দৃষ্টিহীনের অন্ধত্ব মোচনে মরণোত্তর চক্ষুদান করে মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন ফয়েজ আহমদ।