নওগাঁয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা, ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে হানাদার মুক্ত দিবস পালন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার দিনব্যাপী স্থানীয় সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁ এসব কর্মসূচির আয়োজন করে।
দুপুরে শহরের এ-টিম মাঠে আয়োজিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় দুটি দলে ৩০টি ঘোড়া অংশ নেয়। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে মাঠে ভিড় করে হাজারো মানুষ। ‘ক’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে মজিবর রহমানের ঘোড়া। দ্বিতীয় হয়েছে নাজমুলের ঘোড়া এবং তৃতীয় হয়েছে তাসমিনা নামের এক কিশোরীর ঘোড়া। ‘খ’ গ্রুপে প্রথম হয়েছে আব্দুল্লাহর ঘোড়া, দ্বিতীয় হয়েছে হামিদুলের ঘোড়া এবং তৃতীয় হয়েছে কামরুলের ঘোড়া। উভয় গ্রুপের প্রথম স্থান অধিকারীদের একটি করে টেলিভিশন এবং বাকি দুজনকে একটি করে মোবাইল ফোন উপহার দেওয়া হয়।
ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে আসা দর্শক কায়েস উদ্দিন বলেন, ‘আগে অনেক ঘোড়দৌড় খেলা হতো। এখন আর খেলা দেখাই যায় না। চমৎকার এই খেলা দেখে খুব আনন্দ পেয়েছি।’
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ঘোড়সওয়ারি তাসমিনা আক্তার বলেন, খেলায় অংশগ্রহণ করতে পেরে তাঁর খুব ভালো লাগছে।
আয়োজক কমিটির সভাপতি ডি এম আব্দুল বারী জানান, মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা ও চেতনা তুলে ধরতেই ১৮ ডিসেম্বর নওগাঁ হানাদার মুক্ত দিবসে এ খেলার আয়োজন করেছেন তাঁরা। নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রামবাংলার হারানো ঐতিহ্যকে পরিচিত এবং ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।
এর আগে একুশে পরিষদের উদ্যোগে সকাল ১০টার দিকে শহরের এ-টিম মাঠ থেকে জেলা শহরে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। এটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় এ-টিম মাঠে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শেষে এ-টিম মাঠ অস্থায়ী মঞ্চে নওগাঁ মুক্ত দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, নওগাঁ সদর আসনের সাংসদ ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল।
উল্লেখ্য, ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ের পরদিনও যুদ্ধ হয় নওগাঁয়। জেলার বিভিন্ন জায়গায় সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও একুশে পরিষদ নওগাঁর উপদেষ্টা ওহিদুর রহমান বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের খবর জানার পর নওগাঁর যুদ্ধকালীন কমান্ডার জালাল হোসেন চৌধুরী নওগাঁ শহর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৭ ডিসেম্বর সকালে মুক্তিসেনারা শহরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। শুরু হয় সম্মুখযুদ্ধ। এতে শহীদ হন ছয়জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পরদিন মিত্রবাহিনী যোগ দিলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। বিজয়ের দুই দিন পরে নওগাঁ হানাদারমুক্ত হয়।